ভ্রমণে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গুরুত্ব দিলেন সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ

সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ সম্প্রতি মিরসরাইতে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন তরুণের নিহত হওয়ার ঘটনায় জনপ্রিয় সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে হৃদয়স্পর্ষি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি গ্রামীণ আলো’র পাঠকদের জন্য এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।

 

সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ

সেখানে তিনি উল্লেখ করেন- মিরসরাই ট্রাজেডি মনটাকে ভারাক্রান্ত করে দিয়েছে। ভ্রমণে গিয়ে একসঙ্গে এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে পড়া ১১ মায়ের বুক খালি হওয়া কিছুতে মানতে পারছি না। কয়েক দিন আগে কুয়াকাটা সফরে বেরিয়ে গাজীপুরের ৬ জন লাশ হয়ে ফিরেছেন। সড়কে এভাবে বেঘোরে প্রাণহানি পৃথিবীর কোন দেশে হয় বলে জানা নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সুযোগ পেলেই মানুষ ছুটছে ঘুরে বেড়াতে। দর্শনীয় স্থানগুলোতে উপচে পড়ছে। যদিও বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা। পর্যটন স্পটগুলো যেমন অনিরাপদ তেমনি যাতায়াতে ঝক্কি ও দুর্ঘটনার শঙ্কা ভ্রমণপ্রত্যাশী মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলে।

মিরসরাইতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ১১ জন তরুণের মরদেহ

যারা ভ্রমণে বের হন তাদেরও দায় থাকে অনেক ক্ষেত্রে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক সময় গৌণ হয়ে যায়। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার, অদক্ষ চালকের অস্থিরতা যেমন দুর্ঘটনার কারণ হয়, তেমনি ভ্রমণকারিদের বেসামাল আচরণও ঘটাতে পারে বড় ট্রাজেডি। অনেক দ্বীনদার, নামাজী মানুষকে দেখেছি ভ্রমণ গিয়ে নামাজ-কালাম ত্যাগ করে লাগামহীন আচরণ করতে। কঠোর পর্দানশীন মহিলাকে দেখেছি আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে বোরকা পরিত্যাগ করে যথেচ্ছ মেলামেশা করতে। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলে আনন্দভ্রমণ বিষাদে পর্যবসিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

ইসলাম ধর্মে ভ্রমণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টি জগৎকে জানা, চেনার উদ্দেশে ভ্রমণ করা সুন্নত। ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস। সফর বা ভ্রমণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো পূর্ববর্তীদের কীর্তি ও পরিণতি সম্বন্ধে জানা ও শিক্ষা গ্রহণ করা। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকি তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়; তোমরা কি বোঝো না?’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ১০৯)।

আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না ও দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত তা তাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৮২)।

ভ্রমণ বা সফরের বিশেষ উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি-রহস্য অবলোকন করে জ্ঞানার্জন করা এবং তাঁর কুদরত ও শক্তির প্রতি অনুগত হওয়া। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে, ‘তারা দেশ ভ্রমণ করে না? তা হলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে হৃদয়।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪৬)। আরও বলা হয়েছে- বলো, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ২০)।

মিরসরাইতে ট্রেনের ধাক্কায় ক্ষতবিক্ষত মাইক্রোবাস

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে যেহেতু সফর একটি আনন্দময় ইবাদত, তাই সফরের রয়েছে বিশেষ কিছু বিধিবিধান। ইসলামি শরিয়তে সফর বলা হয়- আপন বাসস্থান থেকে বা কর্মস্থল থেকে আটচল্লিশ মাইল বা সত্তর কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্থায়ী নিবাস থেকে বের হওয়া। গন্তব্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত সফর অবস্থা বহাল থাকে। সফর বা ভ্রমণকারীকে মুসাফির বলা হয়। গন্তব্য যদি নিজ বাড়ি বা কর্মক্ষেত্র হয়, তবে সেখানে পৌঁছার পর আর মুসাফির থাকবেন না। আর গন্তব্য যদি নিজ বাড়ি বা কর্মক্ষেত্র না হয় এবং সেখানে অন্তত ১৫ দিন-রাত থাকার নিয়ত বা ইচ্ছা না থাকে, তাহলে সফর অবস্থা বহাল থাকবে। সফর বা ভ্রমণকারিদের জন্যে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থাও রয়েছে। জানানো হয়েছে যে, সফরে দোয়া কবুল হয়। সফরকালীন চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজে ৫০% ছাড় দিয়ে কছর, অর্থাৎ দুই রাকাত পড়তে হয় এবং সুন্নত নামাজ নফল পর্যায়ভুক্ত হয়। সফর অবস্থায় প্রয়োজনে ফরজ রোজা পরে রাখা যায়। সফর অবস্থায় ঈদের নামাজ ও জুমার নামাজ এবং কোরবানি ওয়াজিব হয় না। তবে সুযোগ থাকলে আদায় করা উত্তম।

অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যে ভ্রমণকে উৎসাহিত করেছেন সেই ভ্রমণে গিয়ে আমরা যেন আল্লাহকে ভুলে না যাই। ইবাদতের নিয়তে সফর করি। আল্লাহর হুকুম- আহকাম সম্পর্কে যেন উদাসীন হয়ে না পড়ি। সম্ভাব্য সকল সতর্কতার পাশাপাশি আল্লাহর নিরাপত্তার চাদরে আবৃত রাখার জন্যে তাঁর কাছে যেন সবসময় মিনতি জানাই। মিরসরাই ট্রাজেডিতে অনন্তকালের ভ্রমণে চলে যাওয়া ১১জনের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাদের জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করুন।

জনাব এম আব্দুল্লাহ’র ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *