সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ডিভোর্স সংস্কৃতি

মীম মিজান

লেখক মীম মিজান

সম্প্রতি তারকা দম্পতি তাহসান-মিথিলার বিয়ে বিচ্ছেদে বা ডিভোর্সে সারাদেশের মিডিয়া অঙ্গনসহ সচেতন মহলে সরস আলোচনা চলছে। যদিও পাশাপাশি ইউএনও গাজী তারিক সালমন ও তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকের চোখ হারানো খুবই আলোচনায় এসেছে। তবুও অনেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় এই দম্পতির বিচ্ছেদ নিয়ে তুমুল ঝড় তুলেছেন। গোটাবছর জুড়েই কোনো না কোনো তারকা জুটির বিচ্ছেদের খবর চাউড় হয়ে প্রকাশ হতে দেখা যায় গণমাধ্যমগুলোতে। আর কমচে কম সপ্তাহখানেক তো এ নিউজগুলো হটকেক এর মতো বিশেষ খেয়ালের জায়গা পায়।

ঢালিউঢ এ কি শুধু এই ডিভোর্সের সংস্কৃতি? না! এ রকম ডিভোর্সের নিউজ বা বিচ্ছেদের নিউজ আমরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই শুনতে পাই। হলিউড কিংবা বলিউড সবখানেই চলে এরকম তারকাদের আলোক ঝলকানো প্রেমের পরিণতি পরিণয়। অতপর বিয়ের পরপর ঘটা করে সংবর্ধনাসহ অনেক আনুষ্ঠানিকতা ও লাইভ সাক্ষাৎকার। ভক্ত-দর্শকদের সে কী কৌতূহল! কিন্তু কিছুদিন একছাদের নিচে বসবাস করার পর গুঞ্জন শোনা যায় ভাঙ্গনের। কিছুদিন আলাদা থেকে পরিশেষে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার সেই আলোক ঝলকানি তারকাগণ বিচ্ছেদ ঘটান। আর সবার মনে ঔৎসুক্য কিছু প্রশ্নের উঁকি দেয় এসব ঘটনার ফলে। প্রশ্নগুলি এমন, আসলেই কি তারা একে অপরকে ভালোবাসতো? তবে কেনো তাড়াতাড়িই তারা একজন আরেকজনকে মেনে নিতে পারছেনা? তাদের ভিতরে নাকি ব্যক্তিত্বের প্রকট সমস্যা ইত্যাদি।

আসুন কিছু তারকা জুটির মধুর প্রণয় ও বিচ্ছেদের ইতিহাস ঘাঁটি। লেখার শুরু করেছিলাম যে জুটি নিয়ে হ্যাঁ সেই জুটি হলো তাহসান-মিথিলা জুটি। দর্শক-ভক্তদের কাছে এ জুটির প্রেম-প্রণয় অনেকটা আবেদন দিয়েছিল। ক্লোজ-আপ কাছে আসার গল্পে তাদের নিয়ে নির্মিত নাটক কী না সাড়া ফেলেছিলো! অথচ বিয়ের ১১ বছরের মাথায় দর্শক-ভক্তের স্বপ্নের সেই জুটি তাহসান রহমান খান ও রাফিয়াত রশীদ মিথিলা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেন। তাদের সংসারে ভালোবাসার উপহার হিসেবে রয়েছে তিন বছর তিন মাস বয়সী কন্যা আইরা তেহরিম খান। ১১ বছরের সংসার জীবনের হঠাৎ অবসানের কারণ নিজেরাই বর্ণনা করলেন। ‘প্রথম আলো’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিয়ে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে তাহসান বলেন, ‘দেশের মানুষ পর্দায় আর পর্দার বাইরে আমাদের জুটি হিসেবে ভালোবেসেছেন, সে জন্য আমরা ধন্য। কিন্তু সমাজ কী বলবে—এই ভয়ে অভিনয় করে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, আমরা দুজন এই ব্যাপারটার সঙ্গে একমত নই।’

পাশাপাশি মিথিলা বলেন, ‘আমাদের বিবাহিত জীবন দীর্ঘ ১১ বছরের। ১৪ বছর ধরে একজন আরেকজনকে চিনি। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আসলে হঠাৎ করে নিইনি। আমাদের বোঝাপড়ায় অনেক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বও প্রকট ছিল। জীবন নিয়ে শুরুতে একধরনের পরিকল্পনা ছিল, সময়ের সঙ্গে তা বদলে গেছে। তারপরও এত বছরের সম্পর্ক তো আর এত সহজে কেউ ভেঙে ফেলতে চায় না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কারণ, আমাদের একটি সন্তান আছে। দুই বছর ধরে আলাদা থাকলেও সন্তান আর সংসারের কথা ভেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে ভালো থাকার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা বুঝতে পেরেছি, সম্পর্কটা আর টিকবে না।’

লব্ধপ্রতিষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের বিয়ে বিচ্ছেদের খবর দিয়েই শুরু হয়েছিল এ বছরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ডিভোর্স সংস্কৃতির। ২০১১ সালে হাবিব বিয়ে করেছিলেন চট্টগ্রামের মেয়ে রেহানকে। আড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিয়ে হয়েছিলো তাদের। কিন্তু নানা দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক জটিলতায় টিকলোনা দেশের প্রিয় এ কণ্ঠশিল্পীর প্রিয় বৈবাহিক জীবন। আমরা হাবিবের ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি দেখি কি কারণে এ শিল্পী ভাঙ্গলেন সংসার। ‘গত ১৯ জানুয়ারী দুর্ভাগ্যক্রমে আমার এবং রেহানের সমঝোতামূলক বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আসলে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়নের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। ৫ বছরে আমরা একে অপরকে জানার সময় পাই। ক্রমে বুঝতে পারি যে, আমাদের লাইফস্টাইল ভিন্ন ও একপর্যায়ে আমরা দু’জনই এটা উপলব্ধি করি যে, আলাদা হয়ে যাওয়াটাই আমাদের দু’জনের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য সবচেয়ে উত্তম সমাধান।’

উল্লেখ্য যে ২০০৩ সালে হাবিব প্রথম বিয়ে করেছিলেন লুবায়না নামের এক মেয়েকে। সেই বিয়েও বেশিদিন টিকেনি। নব্বইয়ের দশকে ব্যান্ড তারকা জেমস আর চিত্রনায়িকা রথীর প্রেম-বিয়ে প্রথম সবচেয়ে আলোচনায় আসে মিডিয়ায়। একইভাবে দু’জনার বিচ্ছেদের খবরটি বেশ গুরত্ব পায় সংবাদমাধ্যমে। জেমস-রথীর প্রেমের সংসারে দু’জন সন্তানও আসে ঘর আলো করে। দু’সন্তান এখন মায়ের কাছেই থাকে। হাবিব ওয়াহিদের সাবেক প্রেমিকা অভিনেত্রী মোনালিসা গত ১২-১২-১২ তারিখে বিয়ে করেন আমেরিকা প্রবাসী ফাইয়াজ নামের এক বাঙ্গালীকে তবে বিয়ের বছর না ঘুরতেই তাদের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ছেলে অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল আরমানের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী তারিন। বাবা-মায়ের অজান্তে পালিয়ে গিয়ে ২০০১ সালে তারিন বিয়ে করেন সোহেলকে। ঘটনাটি গোপন রাখার চেষ্টা করলেও পরে জানাজানি হয়ে যায়। সে বিয়ে খুব আলোচিত হয়। তার চেয়েও দ্বিগুন আলোচিত হয় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই দম্পতির সংসার ভাঙনে।

শিমুল-নাদিয়া ২০০৩ সালে পরস্পরের প্রেমে পড়েন। দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০০৮ সালে তারা বিয়ে করেন। তবে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে। কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে বরাবরই তা গোপন রেখেছেন। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নাদিয়া। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় যদি আমরা দেখি তাহলে দেখি যে, জহির রায়হান-সুমিতা দেবী  কাসুন্দি ঘাঁটলে দেখা যায় একাত্তরের নিখোঁজ বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান সুমিতা দেবীর বিচ্ছেদের খবর। তাদের ডিভোর্স হয়েছিল নায়িকা সুচন্দাকে জহির রায়হান বিয়ে করেছিলেন বলে। হৃদয় খান প্রায় চার বছর ধরে প্রেম করে বিয়ে করেন সাত বছরের বড় সুজানাকে। পত্র-পত্রিকা আর টিভির সামনেও স্বগর্বে নিজের প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বলেছেন হৃদয় খান। কিন্তু হৃদয় খানের অনেক সাধনার বিয়ে বছর ঘুরার আগেই ভাঙনের মুখে পড়েছে। কারণ, পারস্পরিক সমঝোতা না হওয়া। অতপর বিচ্ছেদ হয় হৃদয়-সুজানার। এই ডিভোর্স সংস্কৃতির জোয়ারে আরো যেসকল জুটি নৌকো ভাসিয়েছেন তাদের মধ্যে হুমায়ুন ফরিদী-সুবর্ণা মোস্তফা, হিল্লোল-তিন্নি, বিজরী-ইমন, অপূর্ব-প্রভা, জয়া-ফয়সাল, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, শমী কায়সার-রিঙ্গো, আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েত, কুমার বিশ্বজিৎ-রুনা, নকীব খান-সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জুটি।

শুধু গ্লামার ওয়ার্ল্ডে এই সংস্কৃতির ধারা সীমাবদ্ধ নেই। কবি-সাহিত্যিক, নামকরা সাংবাদিক, টিভি ও পত্রিকার কর্ণধার, সম্পাদকসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রায় সর্বত্রই এই ডিভোর্স সংস্কৃতির ছোয়া। এমন একটি বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের ঘটনা যা সাহিত্য অঙ্গনকে নাড়া দিয়েছিল জোরেশোরে আর সেটি হলো কথাশিল্পী প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ ও অভিনেত্রী শাওনের বিয়ে। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন। এই দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘আজ রবিবার’ ধারাবাহিক নাটকের সেটে তার প্রেমে পড়েন মেয়ে শীলা আহমেদের বান্ধবী মেহের আফরোজ শাওন। এক সময় হুমায়ূন-গুলতেকিনের ৩০ বছরের সংসার ভেঙ্গে যায়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার পরে হুমায়ূন আহমেদ বিয়ে করেন শাওনকে। এই ঘরেও হুমায়ূন আহমেদের দুই ছেলে রয়েছে।

এতো ডিভোর্সের মধ্যে অনেকেই দ্বিতীয় সংসারের দিকেও ধাবিত হয়েছেন।

যারা দ্বিতীয়বারের মতো অন্য একজনের সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করা শুরু করেছেন বিয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাতীয় কবির ছোট ছেলে কিংবদন্তি গিটার বাদক কাজী অনিরুদ্ধর মেয়ে অনিন্দিতা কাজী। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী আবারো বিয়ে করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির প্রবাসীদের কাছে বিয়ে পাগলাখ্যাত প্রকৌশলী শাহীন তরফদারকে বিয়ে করেন তিনি। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির একটি কোর্টে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। এর আগে ১১ জুন পারিবারিকভাবে মুসলিম রীতিতে বিয়ে করেন তারা। এটি অনিন্দিতা কাজীর দ্বিতীয় বিয়ে হলেও শাহীন তরফদারের বৈধভাবে পঞ্চম বিয়ে। এছাড়াও তিন্নি-হিল্লোল জুটির একাংশ হিল্লোল এসে নতুন করে নওশিন-হিল্লোল জুটি বেঁধেছে। ন্যান্সি আগের সংসারের মেয়ে রোদেলাসহ এসে নতুন করে সংসার শুরু করেছে। আরফিন রুমি প্রথম বউকে ডিভোর্স দিয়েছেন ও দ্বিতীয় বউ নিয়ে এখন সংসার করছেন। আসিফ নজরুলের ঘর ছেড়ে এখন দ্বিতীয়বারের মতো ঘর বেঁধেছেন রোকেয়া প্রাচী। যদিও আসিফ নজরুল নতুন করে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মেয়েকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টোনাটুনির সংসার পেতেছেন। জাকিয়া বারি মম এখন একা একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভারতে এক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন লেখক।

এছাড়াও সাবিনা ইয়াসমিন, আলমগীর, ডলি সায়ন্তনী, মমতাজ, এজাজ মুন্না, রবি চৌধুরী, তাজিন আহমেদ, অপি করিমরা দ্বিতীয় সংসারে পদার্পণ করেছেন। অনেকেই সম্পর্কের টানা পোড়ণে আত্নহননের পন্থাকে শ্রেয় মনে করেছেন। আত্নহননের ঘটনার কিছু দৃষ্টান্ত হলো: মনে আছে বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি আনোয়ারের কথা? তার পিতা একজন চিকিৎসক, মাতা বিখ্যাত নারী নেত্রী ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম। চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন এর সাথে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ চলচ্চিত্র তৈরির সময় ডলি ইব্রাহিমের পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন। পরিবার, সম্পদ, যশ, খ্যাতির কমতি ছিলনা, তবুও ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে ডলি আনোয়ার বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার পর নানা রকম গুজব শোনা যায়। বলা হয়, ডলি আনোয়ারের স্বামী আনোয়ার হোসেন তাকে তালাকনামা প্রেরণ করেন যা সহ্য করতে না পেরে ডলি আনোয়ার বিষপান করেন। এই গুজবের কোন সত্যতা প্রমাণিত হয় নি, ফলে আরও অনেকের মতই ডলি আনোয়ারের এই মৃত্যু রহস্যই থেকে যায়। এছাড়াও মিতা নূরের আত্নহনন সকলের মনকে কাঁদায়। সালমান শাহ্, সুমাইয়া আজগর রাহা, নায়লা প্রমুখ আত্নহত্যা করেছেন যা আমরা সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানতে পারি। লাস্যময়ী অভিনেত্রী মমও আত্নহত্যা করতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

এইযে ডিভোর্সের ছড়াছড়ি ও সম্পর্কের টানা পোড়ণে আত্নহত্যা। তবুও অনেক জুটি ঈর্ষণীয়ভাবে সুখী জীবন যাপন করছে। বাপ্পা-চাঁদনীর হঠাৎ প্রেম পারিবারিক আপত্তি আর ধর্মীয় বেড়াজালের ভিতরেও বিয়েতে পূর্ণতা পায়। এবং স্বচ্ছন্দ্যের সাথে গড়গড় করে চলছে তাদের দাম্পত্য জীবন। এছাড়াও জাহিদ হাসান-মৌ, সানি-মৌসুমী, বিপাশা-তৌকিরসহ অনেক জুটিই টিকে আছে। যাদের দেখলে মনে হয় তারা নাটকের মতোই ব্যক্তি জীবনেও সুখী। আচ্ছা উপর্যুক্ত যে সকল জুটি ডিভোর্স হয়েছে আর যে সকল জুটির ডিভোর্স হয়নি তাদের মধ্যে কি আপনারা কোনো পার্থক্য খুঁজে পান? আমি একটু ভেবে চিন্তে বলতে পারি যে, প্রধান যে সমস্যা সেটি হলো ব্যক্তিত্বের প্রকট সমস্যা। আপনারা তাহসান-মিথিলা ও হাবিব ওয়াহিদের স্ট্যাটাস গুলো দেখলে এটা স্পষ্টভাবে বুঝবেন যে একে অপরকে ছাড় দেওয়ার কোনো মানুষিকতা ছিলো না। স্বাধীনচেতা ভাব ও যাচ্ছে তাই আচরণ করা।

অন্যের ভালো লাগা ভালোবাসা ও অনুভূতিগুলোকে সম্মান না করাই মূলত এসবের পিছনে দায়ী। তাদের লাইফস্টাইল নাকি একজনের অপরজনের কাছে একেবারেই অসহনীয়। তারা নাকি আর অভিনয়(সংসার জীবনে) করতে পারছে না! যাকে ভালোবেসে হাতধরে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখলেন তাকে কেনো আর সহ্য হয়না? কেনো মেনে নিচ্ছেন না পরস্পরের একটু আধটু খুঁতগুলো? তাহলে আপনারা যে স্বপ্ন দেখান ভালোবেসে ঘর বাঁধলে সুখে পূর্ণ থাকবে সেই ঘর। তবে কি তা আই ওয়াশ? প্রায় সব জুটির ঘরেই একটি করে ফুটফুটে সন্তান আছে। কি অপরাধ এ নিষ্পাপ সন্তানটির? শুধুমাত্র নিজেদের ইগো ও অবাধ স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে এই ডিভোর্স সংস্কৃতি? আপনারা যারা তারকা তারা অনেকের কাছেই জীবনের আদর্শ। সুতরাং সানি-মৌসুমী, জাহিদ হাসান-মৌ, বিপাশা-তৌকিরদের মতো নিজেদের সম্পর্কগুলোতে আস্থাশীল হোন! গোলাপের কাঁটার আঘাত সহ্য করুন! তাহলে আর এ রকম নিষ্পাপ সন্তানগুলো পিতৃহীন বা মাতৃহীন হবে না ও স্বাচ্ছন্দ্যে পিতা-মাতার মায়া মমতায় বেড়ে উঠবে।

লেখক:

প্রাবন্ধিক ও গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

persianmizan@gmail.com

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *