তুরস্কে KPSS পরিক্ষা বাতিল: প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন
গত ৩১ জুলাই তুরস্কে বছরের ২য় KPSS (বাংলাদেশের ভাষায় BCS) পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিক্ষার পর সারাদেশে এক বিশাল হট্টগোল শুরু হয়েছে। বিরোধীরা পেয়েছে নতুন ইস্যু। তুরস্ক সরকার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিষয়টা নিয়ে একধরনের কোনঠাসা অবস্থায় পড়েছে। একটু আগে তুরস্কের KPSS- যেটা বাংলাদেশে BCS পরিক্ষা নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতির আপডেট জানা গেছে, তুরস্কের জাতীয় পরিক্ষা নিয়ন্ত্রন কমিটি (OSYM) মাত্র কয়েকটি প্রশ্নের একটি কোম্পানীর প্রশ্নব্যাংকের সাথে মিলে যাওয়ার অভিযোগে ৩১ তারিখের পরিক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন পরিক্ষার তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর জানানো হবে। (OSYM) এর নতুন প্রেসিডেন্ট এই ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারী কার্যবলী নিরিক্ষন কমিটি তদন্তের আলোকে কেহ অভিযুক্ত হলে শাস্তির প্রদানের সুপারিশ করা হবে।
জানা যায়- এর কারন হচ্ছে; KPSS পরিক্ষার শতাধিক প্রশ্নের মধ্য থেকে (পরিক্ষকটি Multiple choice হয়) মাত্র কয়েকটি প্রশ্ন একটি কোম্পানীর প্রশ্নব্যাংকের সাথে মিলে গিয়েছে। এই পরিক্ষার কয়েকটি প্রশ্ন একটি কোম্পানির প্রশ্নব্যাংকের সাথে মিলে যাওয়াতেই এই হট্টোগোল। পরিস্থিতি জটিলতার দিকে এগুচ্ছে। সকল পরিক্ষার্থীরা এর তদন্তের জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। প্রেসিডেন্টও বসে নেই। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তুরস্কের পরিক্ষা আয়োজনের জাতীয় কমিটির (OSYM) প্রধান হালিছ আখগুন-কে পদত্যাগ করিয়েছেন৷ ৪ আগষ্ট সরাসরি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নেতৃত্বে Devlet Denetleme Kurulu- সরকারী কর্মকান্ড নিরিক্ষন কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।
পরিক্ষা বাতিল হবে কিনা সেটা নিয়ে এখনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে নাই। তবে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পরিক্ষা বাতিল হতে পারে। তদন্তের প্রধান বিষয় হচ্ছে, প্রশ্নব্যাংকের প্রশ্নগুলো কি আসলে কাকতালীয় ভাবে পরিক্ষায় এসেছে নাকি কোন বিশেষ মহল এখানে কাজ করেছে (?) তুরস্কের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে অনেকেই নানামুখি চিন্তা করতে পারেন। মনে করতে পারেন- প্রশ্নব্যাংক তো আমরা প্রশ্ন কমনের জন্যই ক্রয় করি- তাতে সমস্যা কি? কারো কারো এটা ভাবনার বিষয় হতে পারে। এখানেই তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের ভাবনা ও শিক্ষা ব্যবস্থার তফাত। শিক্ষা পদ্ধতির পার্থক্য।
(প্রসংগত: অনার্সের ৪ আর মাস্টার্সের ২ বছরে সব মিলে মাত্র হাতে গোনা ৪-৫ টা থিওরির বই কিনেছি। হা, মাত্র ৪-৫ টি। তবে লাইব্রেরী থেকে অনেক বই এনে পড়েছি। কিন্তু এই বইগুলোর কোনটাই একমাত্র পাঠ্যবই ছিল না। শিক্ষকরা পড়িয়েছন শতশত পৃষ্ঠা। কোনদিনও একটা প্রশ্ন দাগ দিয়ে দেন নাই। দাগ দিবেন কোথায় থেকে- যেখানে কোন প্রশ্নই নাই? পরিক্ষায় প্রশ্ন করেছেন ১ অথবা ২ টি। কোন শিক্ষক ৩ টি অব্দি করেছেন। এর বেশী না। আর যে পরিক্ষা গুলো বহুনির্বাচনি ছিল তাতে প্রশ্ন করেছেন ১৫-২০ টি। লিখিত পরিক্ষার ১ টা প্রশ্নের উত্তরে ১০০। শুনতে এত সহজ মনে হলেও মোটেই তেমন ছিল না। একটা প্রশ্নের মধ্যে পুরো সেমিস্টারে শিক্ষক যা শিখিয়েছেন সব আদায় করে নিয়েছেন। আর শিক্ষার্থী কোনদিনও পরিক্ষার হলে যাওয়ার আগে ধারনাও করতে পারতে না যে কি নিয়ে হতে যাচ্ছে পরিক্ষা। কারন এখানে কমনের কোন বিষয় নাই। …ফেসবুক থেকে সংগৃহিত একটা স্ট্যাটাসের অংশ বিশেষ)
তুরস্কের শিক্ষা ব্যবস্থার ধরণ, উদ্দেশ্য, দক্ষ জনবল তৈরীসহ নানা প্রেক্ষিতে প্রশ্নব্যাংক থেকে কমন পড়াটা অন্যায় হবারই কথা। বাস্তবতা হচ্ছে এ দেশে মুখস্থ বিদ্যার কোন স্থান নেই। সবাইকে অনেক বড় পরিধি নিয়ে পড়তে হয়। প্রশ্ন কমন পাওয়ার চিন্তা করলে ফেল ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই। অথচ বাংলাদেশে ভর্তির সাথে সাথে ধরিয়ে দেয়া হয় কি বিশাল বইয়ের লিস্ট। বহুমাত্রিক সাজেশন্স। সেখান থেকে কমন না আসলে আবার অভিযোগের পাহাড় তৈরী হয়। তুরস্কে KPSS পরিক্ষা বাতিল হওয়ার ঘটনা সুশিক্ষানীতির জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক: