সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে এক মাস ধরে অবরুদ্ধ একটি পরিবার বাড়ির বাহিরে যাওয়ায় মারপিট
গাছ বিক্রির টাকায় চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের হরিনাথপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির পরিবারকে দীর্ঘ এক মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রতিবেশি শহিদুল ইসলাম ও বদিউজ্জামান বুধা ও তার সহযোগিরা বাড়ির চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে রাখায় স্বাভাবিক চলাচল ও কাজকর্ম করতে পারছেনা পরিবারটি। তাদের বাধা উপেক্ষা করে বের হলে নূরুল ইসলাম দম্পত্তিকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। তাদেরকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের হোসেন প্রামানিকের ছেলে নূরুল ইসলাম তার একটি শিমুল গাছ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। গাছ বিক্রির টাকায় চাঁদা দাবি করে প্রতিবেশি শহিদুল ও তার সহযোগীরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে গাছ আটকে দেয়। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ কোর্টে মামলা করেন নূরুল ইসলাম। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার বাড়ির চার পাশে টিন দিয়ে বেড়া দেয় শহিদুল ও তার সহযোগিরা। গত ২৫ জুলাই বদিউজ্জামানের বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মারপিট করে গুরুত্ব আহত করা হয় নূরূল দম্পত্তিকে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি থাকা নূরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতিবেশীরা তার বাড়ির চার পাশে টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে চলা চলের রাস্তা বন্ধ করায় তার এবং স্ত্রীর জন্য বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে হাসপাতালে আনতে পারছেন। চাঁদা বাজি এবং মারপিটের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। চাঁদা বাজির মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কাজিপুর থানার এস আই নজরুল ইসলাম এবং মারপিট মামলার তদন্তকারি অফিসার এস আই শাহীন মাহমুদ ঘটনার স্থল পরিদর্শন করেছেন।
গত একমাস যাবত যারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ওই পরিবারটিকে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ। নূরুল ইসলামের স্ত্রী বুলবুলি অভিযোগ করেন তাকে বেধড়ক মারপিট করেছে আসামিরা এবং তার স্বামীর মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে। ওই মামলায় আসামীরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে তিন জন আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে অসহায় ওই পরিবারটিকে অবরুদ্ধ ও মারপিটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসি। তারা অবরুদ্ধ রাখা ও মারপিটের বিচার চান। হরিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ এক মাস ধরে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আসামিদের বাড়ির ওপর দিয়ে নূরূল দম্পত্তি যাওয়ার সময় তাদেরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে। পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাটি জানে। তার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, অবরুদ্ধ করে রাখা এবং বাড়ি থেকে বের হতে দিবে না এটা হতে পারেনা। মানবধিকার পরিপন্থি কাজ বন্ধের জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
এদিকে চাঁদাবাজি ও মার পিটের ঘটনা অস্বীকার করে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রুলী খাতুন বলেন, গাছ কাটার জন্য চাঁদা চাননি তার স্বামী। বরং বিরোধপূর্ণ স্থানে গাছটি ছিলো বিধায় বাধা দেয়া হয়। ওই ঘটনায় বিরোধের জেরে নূরুল ইসলামের বাড়ির সামনের রাস্তায় বেড়া দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দুটি মামলা হলেও পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসি। চাঁদা বাজির অভিযোগে আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাজিপুর থানার সাবইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম বলেন, কোটের পিটিশন তিনি পেয়েছেন। ঘটনার স্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত প্রতিবেদন দিবেন। আর মারপিটের মামলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই শাহীন মাহমুদের সাথে যোগায়োগ করা হলে তিনি বলেন, অসামীরা জামিন নিয়েছে। বাদি অবরুদ্ধ কি না তা জানেন না। অবরুদ্ধের ঘটনা সঠিক হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাজিপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন। এব্যাপারে মামলা হয়েছে। কেন একমাস সময় পরেও অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হয়নি পরিবারটি এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমি আপনাকে পাঁচ মিনিট পরে জানাচ্ছি। তার পর অবশ্য তিনি কিছু জানননি। কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি তার নলেজে নেই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা অবশ্যই আইন বর্হিভূত। তিনি বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত অপরাধিদের আইনের আওতায় নেয়া হোক। সেই সাথে ভূক্তভোগী নূরুল ইসলামের পরিবারকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করবে প্রশাসন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: