পবিত্র আশুরা: শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার সময়
হিজরি ১৪৪৪ সনের ১০ মহররম আজ, পবিত্র আশুরার দিন। ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাস যেমন বিশেষ মর্যাদাপূর্ন একটি মাস তেমনি ১০ই মহররমও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ন , গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বলিত একটি দিন। সৃষ্টির শুরু থেকেই মহান আল্লাহ এ দিনকে বিশেষ মর্যাদাময় করেছেন। পবিত্র আশুরার দিনে এমন সব ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা অন্য কোনো দিনে একীভূত হয়নি।যুগে যুগে নবী-রাসূলদের প্রায় সকলেই এ দিনে বিভিন্ন বিপদ মুসিবতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে রহমত প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
কথিত আছে, এ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি হওয়া থেকে শুরু করে কিয়ামাত সংগঠিত হওয়া , হজরত আদম (আ.) এর বেহেশত থেকে দুনিয়ার বুকে নেমে আসা , আবার এই দিনেই মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর দোয়া কবুল হওয়া , এই দিনে আরাফাতের ময়দানে হযরত হাওয়া (আ.) এর সাথে সাক্ষাৎ হওয়া, হজরত নুহ (আ.) এর জাতির লোকজন আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত হওয়া থেকে উদ্ধার প্রাপ্ত হওয়া , হজরত ইবরাহীম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর আশুরার এই দিনে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া , হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগে ভোগার পর আশুরার এই দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করা, হজরত ইয়াকুব (আ.) এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.) তার সৎ-ভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর মিশরে গিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করে দীর্ঘ ৪০ বছর পর আশুরার এই দিনে তার পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া , হজরত ইউনুস (আ.) আশুরার এই দিনে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়া,হজরত মুসাকে (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দেয়াসহ ফেরাউনকে দলবলসহ নীল নদে ডুবিয়ে মারা, হজরত ঈসা (আ.) এর জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালালে আশুরার এই দিনে আল্লাহ তাআলা তাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া , সবশেষে আশুরার এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী করিম (সা.) এর কলিজার টুকরা আদরের নাতি হযরত ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করাসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা সম্মৃদ্ধ একটি দিন পবিত্র আশুরা। যুগে যুগে সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ের, যাবতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে জাগরণের দিন পবিত্র আশুরা।
মজলুমের দোয়া কবুলের দিন পবিত্র আশুরা!
সারা বিশ্বজুড়ে বর্তমান যুলুম-নিপীড়নসহ যাবতীয় ব্যক্তিগত, সামষ্টিক ও জাতীয় জীবনের বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য আমরা এদিনে রোযা রাখাসহ , নফল ইবাদত ও বেশী বেশী করে মহান রবের কাছে সাহায্য চাইবো, তাঁর কাছে ধরনা দেব,আশুরার মূল শিক্ষায় উজ্জিবীত হব।
আশুরার মূল চেতনাই হলো–
অন্যায়- অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম,
সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অনিবার্য!
এ বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। মহান আল্লাহ মুসলিম জাহানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার তৌফিক দিন।
সাবিকুন্নাহার মুন্নী
১০ মহররম ১৪৪৪ হি.
৯ আগষ্ট ২০২২ইং.