প্রকৌশলী মাসুদুর খান যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন শিল্পের অভিজাত উদ্যোক্তা

মানুষের ইচ্ছা, একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা এগুলোর সমন্বয় থাকলে যে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌছাতে পারে তার সেরা দৃষ্টান্ত প্রকৌশলী মাসুদুর খান। বুয়েট থেকে (যন্ত্র কৌশল) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করলেও তিনি এখন পুরো দস্তুর একজন বড় হোটেল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীক সফলতায় তার রয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা।

যুক্তরাষ্ট্রের অরেগান অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড শহরে বসবাসকারী মাসুদুর খান ছাত্রজীবনেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নকে তিনি এখন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মাসুদুর খান জানান, বুয়েটে ভর্তি হয়ে প্রথম বছরেই কিছু সহপাঠিদের নিয়ে যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় প্রিজম কোচিং সেন্টার খোলেন। এই কোচিং সেন্টারের অধীনে তারা সে সময় প্রকাশনী ও গাইড বের করেন। যা এখনও ব্যাপক প্রচলিত। বুয়েট থেকে ১৯৯৬ সালে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক শেষ করে মাসুুদুর কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। ১৯৯৮ সালের দিকে পেট্রোবাংলায় সহকারি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। এখানে দুই বছরের মত চাকরি করেন।

এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০০০ সালে আমেরিকায় গমণ করেন। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে ২০০২ সালে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট নগরীতে টয়োটা কোম্পানিতে চাকরি নেন। এখানে চার বছর পর তিনি ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জেনারেল মোটরসে যোগ দেন। এসময় তিনি জেনারেল মোটরস এর অর্থায়নে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সালে জেনারেল মোটরস ছেড়ে সরাসরি হোটেল ব্যবসায় নামেন মাসুদুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিজে কিছু করবো, অন্যের অধীনে চাকরি না করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ২০০৬ সালে দিকে বুয়েটেরই কয়েকজন বন্ধু মিলে আমেরিকার বিখ্যাত ফ্রাঞ্চাইজ ‘মোটেল সিক্স’ কিনে নেই। ধীরে ধীরে আমাদের হোটেল ব্যবসায়ের কাজ সম্প্রসারণ হচ্ছিল। মিশিগানে চাকরি ও ব্যবসা ভালোভাবেই চলছিল।’

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ড. তাসলিমা সুলতানা ইনটেল কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ায় ২০০৯ সালে অরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডে চলে যান। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি নিজেও মিশিগানে চাকরি ও ব্যবসা ছেড়ে স্ত্রীর সাথে পোর্টল্যান্ডে চলে আসি। এখানে স্ত্রীর পরামর্শে আবার নতুন করে হোটেল ব্যবসায় নামেন তিনি। প্রথম দফায় ‘ইন্ অ্যাট সী সাইড’ নামে একটি হোটেল কিনেন মাসুদুর। এরপর একে একে অরেগান রাজ্যের বিভিন্ন শহরে আরও ১২ টি হোটেল কিনেন। যেগুলোর অধিকাংশই সৈকতের একেবারে কাছাকাছি অবস্থিত। মাসুদুর খান হোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এ পেশায় ভালো সাফল্য আসায় তিনি এটাকেই স্থায়ী পেশা হিসেবে নেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতি সন্তান মাসুদুর খান বলেন, ২০১২ সালে নেকানিটাম নদীর তীরে একটি জমি কিনে নিজেই সেখানে ৪৮ কক্ষবিশিষ্ট বুটিক হোটেল নির্মাণ করি। এতে জমিসহ মোট পাঁচ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। কেবল উদ্যম, অধ্যবসায়, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মাসুদুর খান ১২টি হোটেলের অংশীদার হতে সক্ষম হন। অংশীদার অন্যরাও বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলী।

শুধু মার্কিন মুলুকেই নয় নিজের জন্মভূমিতেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন মাসুদুর খান। দেশপ্রেমী মাসুদুর খান বলেন, দেশের সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে, দেশের প্রত্যেকটা জিনিসই আমার কাছে আপন মনে হয়। নিজের জন্মভূমি নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রবাস মেলাকে তিনি বলেন, আমি সব সময়ই দেশের কথা ভাবি, দেশের জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা করি। দেশের জন্য কিছু করবো এটা অনেকদিন থেকেই আমার ভাবনায় ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে ঢাকার গুলশান ২ এ হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইসি নামে একটি হোটেল এর আত্মপ্রকাশ করে। এটি এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি সবার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেটি ২০১৯ এর এপ্রিলে ইউকে বেস্ট ট্যুরিজম এবং বেস্ট ব্যুটিক হোটেল হিসেবে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে বলে তিনি জানান।

পুরস্কার: হোটেল ব্যবসায় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ মাসুদুর খান দেশে ও বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে অরেগান রাজ্যে হোটেল অব দ্যা ইয়ার ২০১৪ সালে, পুরো আমেরিকার ‘ইনডিপেনডেন্ট’ হোটেলগুলোর মধ্যে ‘হোটেল অব দ্য ইয়ার এ্যাওয়ার্ড ২০১৬’, অরেগনের ‘ক্যাল্টশপ কাউন্টি’ থেকে ‘বিজনেস ইন্টারপ্রেনার অব দ্য ইয়ার এ্যাওয়ার্ড ২০১৪’, ‘সী সাইড রোটারি ক্লাব’ থেকে বিজনেস ইথিক্স এ্যাওয়ার্ড ২০১৩ ‘সী সাইড চেম্বার এ- কমার্স’ থেকে ‘করপোরেট বিজনেস এ্যাওয়ার্ড’, ২০১৬ ও ১৭ সালে পরপর দুই বছর ‘অরেগান বিজনেস কমিউনিটি’ থেকে ‘বেস্ট হান্ডের্ড ডেসটিনেশন র‌্যাঙ্কিং’ এ্যাওয়ার্ড’, ‘ইনোভেটর অব দ্যা ইয়ার ইউএসএ’ ২০১৯ সালে ডিসিআই কর্তৃক ‘কী কনট্রিবিউশন এ্যাওয়ার্ড’ প্রভৃতি।

দেশে প্রবাসে এ ধরনের ব্যবসায়ীক সাফল্যের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী থেকে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী বনে যাওয়া মাসুদুর খান বলেন, ‘অবশ্যই আমার মা জাহানারা রহমান এবং বাবা আব্দুর রহমানের দোয়া রয়েছে। আর এসব কাজে আমার সাফল্যে আমার স্ত্রীর অবদান এবং উৎসাহ-ই মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। কারণ আমার ব্যবসায়ীক কাজে যখনই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখনই আমার স্ত্রী পাশে থেকে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তার স্ত্রী বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ড. তাসলিমা সুলতানা ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স ও একই বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। চাকরির পাশাপাশি তিনিও স্বামীর ব্যবসা দেখাশোনা করেন। পারিবারিক জীবনে প্রকৌশলী মাসুদুর খান এবং ড. তাসলিমা সুলতানার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সুবাহ খান, মেঝো মেয়ে সারী খান এবং ছোট মেয়ে মিরা জাহানা খান।

বি: দ্র: লেখাটি প্রকৌশলী মাসুদুর খান এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *