বগুড়ার গাবতলীতে মেয়েকে দিয়ে অপহরন ও মুক্তিপনের নাটক: পুলিশের জালে ধরা পড়লো মা ও নানী

বগুড়ার গাবতলীতে প্রবাসী স্বামীর টাকা আত্মসাত করতে নিজের পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েকে লুকিয়ে রেখে অপহন ও মুক্তিপনের নাটক সাজাতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ল মা ও নানী। বগুড়ার শেরপুর থেকে উদ্ধার করা হয় অপহরনের কথিত স্কুল ছাত্রীকে। ঘটনাটি ঘটেছে গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা এলাকায়। গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ১০ আগষ্ট বুধবার বিকেল ৩ টায় একজন ফোনে তাকে জানায়, দুর্গাহাটা বাজারে অবস্থিত সার্ক মডেল কেজি স্কুলের ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী মঞ্জিলা খাতুন (উঞ্জিলা) (১১) কে কৌশলে স্কুল থেকে অপহরন করে নিয়ে গিয়ে পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করছে। এমন সংবাদ পাওয়ার পর গাবতলী মডেল থানার এস আই হাফিজ উদ্দীনসহ সঙ্গীয় ফোর্স দ্রুত ঘটনার স্থান দুর্গাহাটা সার্ক মডেল কেজি স্কুলে যায়। সার্কের হিসাব রক্ষক মোঃ রাসেল মাহমুদ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমানকে জিজ্ঞাসাদে জানতে পারেন, ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী মঞ্জিলা খাতুন (উঞ্জিলা) সকাল ১০ টায় অসুস্থার কারনে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেছে। পুলিশ স্কুলের সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখতে পান, উঞ্জিলা তার বাড়ি নিজ দুর্গাহাটা লাল খাঁ পাড়া না গিয়ে উল্টো পুর্ব দিকে যাচ্ছে। তার পিছনে বোরকা পরিহিত একজন মধ্য বয়সী মহিলাও যাচ্ছে। এক পর্যায়ে স্কুলছাত্রী উঞ্জিলা দুর্গাহাটা ঘোষপাড়া সড়ক দিয়ে অটোরিকশায় উঠে, উত্তর দিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুবাড়ির দিকে রওনা হয়।

 

৫ম শ্রেনীর ছাত্রী মঞ্জিলা খাতুন (১১)

 

পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের মাধ্যম অটো রিকশার ড্রাইভারকে শ্মানাক্ত করে জানতে পায়, ফুলবাড়িতে উঞ্জিলা খাতুন’র নানী নাজমা বেগম সেখানে অপেক্ষায় ছিল। তার কাছ থেকে উঞ্জিলার মা ফারজানা এসে উঞ্জিলাকে নিয়ে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার, উলিপুর গ্রামে ফারজানার খালারবাড়ি অথ্যাৎ উঞ্জিলার নানির বোনের বাড়িতে রেখে আসে। এরপর গাবতলী থানায় এসে উঞ্জিলার মা ফারজানা জানায়, তার মেয়েকে অপহরন করা হয়েছে, তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করা হচ্ছে। এমন সংবাদ পাওয়ার পর নড়ে চড়ে বসে পুলিশ। দুপুরের না ওয়া খাওয়া বন্ধ করে, গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলামের সার্বিক সহায়তায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জামিরুল ইসলামসহ অন্যান্য এস আই দ্রুত অভিযান চালিয়ে, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার উলিপুর গ্রাম থেকে ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী মঞ্জিলা খাতুন (উঞ্জিলা)কে কোন মুক্তিপন ও ঝামেলা ছাড়াই উদ্ধার করে। উঞ্জিলাসহ তার মা ফারজানা ও নানীকে গাবতলী থানায় আনা হয়। সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাসে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ওসি সিরাজ জানায়, উঞ্জিলার বাবা উকিল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইরাকে থাকেন। ইতিপুর্বে তার মা ফারজানা স্বামী উকিলের পাঠানো ১৫ লাখ টাকা হারিয়ে গিয়েছে বলে তাকে জানালে, স্বামী তা মেনে নেয়। উকিল মিয়া ১/২ দিনের মধ্য দেশে আসবেন বলে, স্ত্রী ফারজানাকে ফোনে জানায়। এসংবাদ শোনার পর স্ত্রী ফারজানা ও তার মা নাজমা বেগম টাকা আত্মসাতের জন্য উঞ্জিলাকে মিথ্যা কথা শিখিয়ে তাকে ব্যবহার করে, অপহরন ও মুক্তিপনের ফন্দি আটেঁ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পেয়ে, স্বামীর টাকা আত্মসাত ও জায়েজ করতে, মা ফারজানা ও নানী নাজমা বেগম অপহরন ও মুক্তিপনের মিথ্যা নাটক তৈরী করে। যা গাবতলী থানা পুলিশের তাৎক্ষণিক দ্রুত পদক্ষেপের কারনে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে। ফারজানা ও তার মা নাজমা বেগম ও ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী শিশু মঞ্জিলা খাতুন (উঞ্জিলা)কে গাবতলী মডেল থানা  ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদেরকে নিবিরভাবে আরো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে, ওসি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। এই ঘটনা এলাকায় ব্যবপক  চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

বগুড়া অফিস:

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *