ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই
ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই। এক দিন খালি হাতেই চলে যেতে হবে। অর্থ-সম্পদের দিকে না দৌড়িয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ৩১ আগষ্ট বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের দুটি প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘জয়বাংলার’ মোড়ক উন্মোচন করেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদ এবং ’৫২-র ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু গড্ডালিকা প্রবাহে অর্থ সম্পদের পেছনে ছুটলে ওই অর্থ সম্পদেই ভেসে যেতে হয়। তাতে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও থাকে না, দেশ এবং মানুষকেও কিছু দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। ছাত্রলীগকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতুফালতু লোক ঢুকানো যাবে না। তাতে নিজেদের, দলের ও দেশের বদনাম হয়। আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা হয়। এত বড় একটা সংগঠন আর আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভিতরে ঢুকে যায় এবং নিজেরাই গোলমাল করে। বদনামটা পড়ে ছাত্রলীগের ওপর। তিনি বলেন, আমাদের পেছনে তো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে।
তিনি বলেন, ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলে বড় নিউজ। নিজেদের ঠিক থাকতে হবে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পড়াশোনার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার লেখা আমার দেখা নয়া চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্টস সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বলব, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেব। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আগামী দিনে চলার পথ তৈরি করতে হয়। যদিও ইতিহাসের একই রকম পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তবে সময়ের বিবর্তনে সেটা আসবে। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি বলেই আমরা সেটা জানি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাকে আসতে দিতে চায়নি। বাধা দিয়েছে। যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলাম তখন আসলাম। কিন্তু আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতেও ঢুকতে দেয়নি। আমি যে একটা মিলাদ পড়ব, নামাজ পড়ব- সেটারও সুযোগ জিয়াউর রহমান দেয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দায়িত্বভার নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর আমরা ক্ষমতায় এসেছি। প্রথম একটা টার্ম গেছে। দ্বিতীয়বার এসে এখন এই থার্ড টার্ম পর্যন্ত অন্তত বাংলাদেশের উন্নতি আমরা করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
ডেল্টাপ্ল্যানের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে, ২১০০ সালের বদ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান- সেটাও প্রণয়ন করে দিয়েছি। যারা আগামীতে আসবে, তারা এটা অনুসরণ করলে এই বাংলাদেশের অভিযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। তিনি বলেন, যখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না, খবর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা নেমে গেছে, ধান কেটেছে। কৃষকের ঘরে ধান পৌঁছে দিয়েছে। করোনার সময় যেখানে লাশ ফেলে আত্মীয়স্বজন চলে যায় সেখানে আমাদের ছাত্রলীগসহ দলের নেতা-কর্মীরা তাদের লাশ কাঁধে নিয়ে দাফন-কাফন করেছে। আমি আগেই বলেছি, ছাত্রলীগ সব কাজে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। ছাত্রলীগকে এভাবেই মানবতার সেবা করে যেতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি সব থেকে বেশি লেখাপড়া শিখতে হবে।
আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের প্রস্তুত করবে। কারণ, এখন প্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। দেশ চালাতে গেলে জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে এবং দূর-দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। ভবিষ্যতে এই দেশের জন্য আমরা কী করব- সেই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে। আর সেটা না থাকলে কোনো দিনই দেশের উন্নতি হবে না। তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তো ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমাবাজি। আমরা সেখান থেকে অন্তত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।
কৃতজ্ঞতা: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন