জয়পুরহাটে খরার পর সার সংকট: সারের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন কৃষকরা
সম্প্রতি তীব্র কাঠফাটা খরার পর কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে জয়পুরহাটে আমন ধানের রোপনের কাজ তরিঘড়ি করে শেষ করেছেন কৃষকর। আমনের চারা রোপনের তিন সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে সার ছিটিয়ে দিতে হবে সবুজ ধানক্ষেতগুলোতে। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা ও বস্তায় ৩শ টাকা বেড়ে যাওয়ায়, মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা পূর্বের মজুদ করা সার নতুন দামে বিক্রির নানা কৌশল হাতে নিয়েছেন। কেউ দোকান বন্ধ রাখছেন কেউ বা আবার বলছেন দোকানে সার নেই। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সার বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান ডিলাররা। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের (বাফা)’র সরকারি সার গুদামের কর্মকর্তা প্রদপি কুমার জানান, গত ৩ মাস আগে ইউরিয়া সারের দাম ছিল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৮০০ টাকা, এখন জালানী তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচও বেড়েছে, তাই সরকারিভাবেই বস্তা প্রতি ৩’শ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১হাজার ১০০ টাকা ধরা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গত টানা অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরার পর কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমলে তরিঘড়ি চাষ দিয়ে আমন ধানের চারা রোপনের ইতোমধ্যেই প্রায় শেষ করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। নিয়ম অনুযায়ী রোপনের ২/৩ সপ্তাহ থেকে ১ মাসের মধ্যে সার ছিটিয়ে দিতে হবে সবুজ ধানক্ষেতগুলোতে। তাই ধান রোপনের পাশাপাশি সার সংগ্রহে ধানচাষীদের দৌড়াতে হচ্ছে সার ডিলার ও বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে। এরই মধ্যে সারের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরনাপৈল রেলগেট এলাকার প্রান্তিক চাষী নাসির হোসেন, পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামের মাহমুদ হোসেন, কালাই উপজেলার থুপসারা গ্রামের নজরুল ইসলামসহ জেলার অন্যান্য কৃষকরা জানান, তারা আমন ধানের চারা ইতোমধ্যে রোপনের কাজ শেষ করেছেন, এখন ক্ষেতে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেওয়ার সময় হলেও তারা সার সংগ্রহ করতে হিমসিম খাচ্ছেন।
এক দিকে সারের দাম বেশী, আবার চাহিদামত ব্যবসায়ীরা তাদের সারও দিচ্ছেন না বলে তারা ধানের ফলন নিয়ে বেশ উৎকন্ঠায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ ধানচাষীদের। সারের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে নিয়ে সার ডিলার ও ব্যাবসায়ীরা পূর্বের কম দামের মজুদ করা সার এখন বেশি দামে বিক্রির নানা কৌশল করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষকর। ধানসহ কৃষি পূন্য উৎপাদনে বীজ, সার, কিটনাশক, জালানি তেল সহ চাষের প্রয়োজনীয় খরচ অনেক বেশি হওয়ায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা সারের দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন। জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের উজ্জল হোসেন, ক্ষেতলাল উপজেলার তালশন গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুরের হাসান আলীসহ জেলার অনেক আমন ধান চাষী অভিযোগ করেন, সার ব্যাবসায়ীদের কাছে সারের জন্য ধর্না দিলেও তাদেরকে সার সংকটের কথা বলে বেশী দাম নেওয়ার পরও চাহিদামত সার দিচ্ছেন না, জমিতে সঠিক সময়ে পরিমান মত সার না দিলে আশানুরুপ ধানের ফলন পাওয়া যাবে না।
সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ না করায় ফলন বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সদর উপজেলার পাকুরতলী এলাকার প্রান্তিক কৃষক এন্তাজুল ইসলাম এন্তা বলেন, ‘গত বছর ট্যাকার অভাবে জমিত সার দেওয়া পারিনি বুলে অদ্দেক ফলন পাছোঁনো, এখন তো সারই পাছি না, সার ছিটান না পারলে ধানই ক্যামনে হবে, আর খামোই কি? তাই কৃষি ক্ষেত্র সচল রাখতে তারা পর্যাপ্ত সার সরবরাহেরও দাবী জানান তারা। তবে সার ডিলার ও ব্যাবসায়ীরা বলেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সারের মূল্য বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ তা করে থাকেন, তার দায়ভার তকেই নিতে হবে। জয়পুরহাট জেলা শহরের সার ডিলার মিজানুর রহমান মিন্টু, সদর উপজেলার হানাইল চল্লিশ পীড় দরগাহ এলাকার গোলজার হোসেন, ক্ষেতলাল উপজেলার নিমতলী এলকার সার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনসহ সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা এমন মন্তব্য করে জানান, সরকারের নির্দ্ধারিত দরেই তারা সার বিক্রি করছেন। এ দিকে সার সংকটের অভিযোগ অস্বীকার করে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাটে এ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের জন্য ৩ মাসে ৮ হাজার ৬৯৫ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার মজুদ আছে। এ মজুত পর্যাপ্ত, তাই সারের কৃত্রিম সংকট যাতে না ঘটে, তাই নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানালেন জেলার প্রধান কৃষি কর্মকর্তা।