বগুড়ায় পার্কিংয়ের জায়গায় রেলওয়ে মার্কেট নির্মাণ ৮ কোটি টাকার বানিজ্য নিঃস্ব সাধারন ব্যবসায়ী
বগুড়ায় রেলওয়ে জায়গা লিজ নিয়ে নকশা অমান্য করে গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করে প্রায় ৮ কোটি টাকার বানিজ্য করেছে বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হায়দার আলী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শুকরা এন্টারপ্রাইজ। মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট সুপার মার্কেট নাম দিয়ে নকশার বাহিরে অতিরিক্ত প্রায় ৮০টি দোকান নির্মান করে সাধারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দোকানঘর গ্রহীতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। গত বুধবার দুপুরে ওই মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পূর্নেন্দু দেব এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযানে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বগুড়া রেলস্টেশনের বিপরীতে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৭ বর্গফুট জায়গা লীজ নেয় রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট। এই কল্যান ট্রাস্টের অধিনে বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড সেখানে দোকানঘর নির্মান করা হয়। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাবেক রেলওয়ে কর্মচারী হায়দার আলী। হয়দার আলী জানান, বরাদ্দকৃত জায়গায় বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ৮৭২টি দোকানঘর নির্মান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুকরা এন্টারপ্রাইজ। নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত জায়গার বাইরে পার্কিং স্পেসে নিষেধ করা শর্তেও শতাধিক দোকান নির্মান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন দাবি করেন হায়দার আলী। অপরদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেন হায়দার আলী ও তার ছেলে রায়হান কবির অন্যায় ভাবে দোকান গ্রহীতাদের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব দোকান ঘর নির্মান করেছে। এক একটি দোকানের আয়োতন ৮০ বর্গফুট। নির্ধারিত জায়গায় মোট ৮৭২টি দোকানঘর করা হয়। তাতে রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট দোকান প্রতি লীজ বাবদ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া একেকটি দোকানঘর নির্মান এবং লাইসেন্স ফি বাবদ মোট খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুকরা এন্টারপ্রাইজ এবং বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হায়দার আলী প্রতিটি দোকান ঘর থেকে নিয়েছেন ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা এমনই অভিযোগ করেন সাধারন ব্যবসায়ীরা।
লীজের জায়গায় মার্কেট করার আগে সরকারিভাবে নকশা অনুমোদন করা হয়। সেখানে পার্কিং স্পেস রাখা হয় ১২ হাজার ৬শ বর্গফুট জায়গা কিন্তু মার্কেট নির্মানের সময় পার্কিং এর কোন জায়গা না রেখে প্রায় ৮০টি অতিরিক্ত দোকান করা হয়। যা থেকে ঠিকাদিরী প্রতিষ্ঠান এবং বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হায়দার আলীপ্রায় ৭ কোটি টাকা গ্রহন করেন। এসব একাধিক দোকান ক্রেতারা জানান তাদের জানা ছিল না এসব দোকান পার্কিংএ জায়গায়। দোকান হারিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন হায় হুতাশ করছেন। জায়গা লীজ দেওয়ার সময় নকশা অনুযায়ী পার্কিং স্পেসের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয় কিন্তু পার্কিং স্পেসের জায়গাতেও দোকান নির্মাণ করে রেলওয়ের নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে লীজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুকরা এন্টার প্রাইজ এর স্বত্তাধিকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ নকশা বহির্ভুত দোকানঘর নির্মানের কথা স্বীকার করে জানান, তিনি বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর নির্মানের জন্য ১ হাজার ৯২৩ টাকা নিয়েছেন অতিরিক্ত কোন টাকা গ্রহন করেন নি। বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি হায়দার আলী জানান, নির্মান প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত দোকানঘর নির্মান করে সাধারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার উপর দোষ চাপাচ্ছেন। বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হায়দার আলী এবং সাধারণ সম্পাদক তার ছেলে রায়হান কবীর। সমিতির সভাপতি হায়দার আলীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীর নামে মার্কেটের নামকরণ করা হয়। অভিযান চলাকালে সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবীরের উপর ধাওয়া করেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মারধরে আহত হন রায়হান কাবীর।
বগুড়া অফিসঃ