দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গাপূজা: বগুড়ায় তুলির রঙে রঙিন হচ্ছে প্রতিমা

দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসবকে ঘিরে চলছে শেষ সময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ। ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার প্রতিমা শিল্পীরা। মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি বানানো শেষ। মনের মাধুরী মিশিয়ে দেব-দেবীকে সাজাচ্ছেন প্রতিমা কারিগররা। বাহারি রঙ আর হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমা। আজ রবিবার শুভ মহালয়া, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু হবে সনাতন ধর্মবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায় বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার নব-বৃন্দাবন হরিবাসর মন্দিরে চলছে রাত-দিন প্রতিমা তৈরির কাজ। দুর্গাপূজার ২৮টি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি হচ্ছে এখানে। দেবীদুর্গাকে সাজাচ্ছেন বিখ্যাত মৃৎশিল্পী কাজল প্রাং।মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি দেওয়া হয়েছে দুই মাস আগেই।

রোদে শুকিয়ে সেগুলোকে রঙ-তুলিরপ্রলেপ দিচ্ছেন প্রতিমা কারিগর ও সহযোগীরা। একই সঙ্গে চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দুর্গাপূজার পরপরই শুরু হয় সরস্বতী ও কালীপূজা। তাই তো দেবিদুর্গা সঙ্গে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে। জানতে চাইলে মৃৎশিল্পী কাজল প্রাং বলেন, এ বছর দুর্গাপূজায় ২৮টি মণ্ডপের অর্ডার পেয়েছি। চার মাস আগেই অর্ডার দিতে হয়। দিন-রাত পরিশ্রম করে শেষ সময়ের কাজ চলছে। আমরা পূর্বপুরুষেরা এ পেশায় জড়িত ছিলেন। এটা শুধু আমাদের পেশা নয়। কাজের মধ্যে আমাদের প্রেম ও ভক্তি কাজ করে। এ কাজে প্রবল আগ্রহ না থাকলে করা সম্ভব নয়। তবে, এ প্রজন্ম সময় পরিশ্রম বেশি ও সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পাওয়াতে এ শিল্পে অনেকেই আসতে চায় না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মাটি, রঙ, বাঁশের দাম বেড়ে গেছে। আগে দুর্গাপূজার এক সেট প্রতিমা তৈরি করতে ২০থেকে ৫০হাজার টাকা খরচ হতো। এখন তা বেড়ে ৭০হাজার টাকার বেশি হয়ে গেছে। পরিশ্রম অনুযায়ী আমাদের পারিশ্রমিক মিলে না।

গত দুই বছর থেকে কাজের চাপ বেশি। ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। এখনো কাজ শেষ করতে পারিনি। আজ মহালয়ার প্রথমদিন অর্ডার বুঝিয়ে দিতে হবে। জিনিসপত্রের দাম প্রতিমা তৈরির ব্যয় বেড়েছে। জানা গেছে, এ বছর বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় ৬৭৯টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২৪০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮৯টি সাধারণ। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামি পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর সেই হিসেবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। এ বছর দুর্গাদেবীর আগমন হবে হাতিতে চড়ে, গমন হবে নৌকায় চড়ে। বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, এ বছর পৌর এলাকায় ৬৬টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিও শেষ পর্যায়ে।

কিছু জায়গায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। এখন যেহুতু করোনার প্রভাব নেই, এবার সবাই ভালোভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবেন। পূজা সুষ্ঠু ও নিরাপদে পালন করতে পৌর কমিটির পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। বগুড়ার জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, দূর্গাপূজায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে বগুড়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের তালিকা করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পূজা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পালন করতে মাঠে সবাই মিলে একত্রে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

বগুড়া অফিসঃ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *