বগুড়ায় বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড়
বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামগঞ্জে। ফুটবলের বিশ্ব-লড়াই সুদূর কাতার হলেও বগুড়ার ফুটবলপ্রেমীরা মেতেছে বিশ্বকাপ উৎসবে। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা, উন্মাদনা আর আগ্রহের কমতি নেই। ফুটবল যুদ্ধ শুরুর আগে অনেক ভক্ত বাড়ির ছাদে টানিয়েছেন প্রিয় দলের পতাকা। রাস্তার এক পাশ আর্জেন্টিনা, অন্য পাশ ছেয়ে গেছে ব্রাজিল জার্মানিসহ অন্যান্য পতাকায়। এভাবে বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে সবাই। হাজার মাইল দূরের খেলাগুলো সবাই একসাথে বসে উপভোগ করতে বগুড়ার পাড়া-মহল্লায় নিজেদের উদ্যোগে বসিয়েছেন বড় পর্দা প্রজেক্টর। এতে পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল উৎসবে মেতেছেন সবাই। এ তালিকায় ছোট্ট শিশু থেকে বাদ পড়েননি বয়স্করাও।
গত রবিবার (২০ নভেম্বর) কাতারের মাঠে শুরু হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ এর ২২ তম আসর। এ আসরকে ঘিরে উদ্বোধনী দিন থেকেই বগুড়া শহরের বিসিক শিল্প নগরীর পূর্বে ফুলবাড়ীর তিনমাথা মোড়ে দীর্ঘ একযুগের ঐতিহ্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন করে আসছেন ক্রীড়াপ্রেমী এলাকাবাসী। সরেজমিন গতকাল রাতে সেখানে গিয়ে ফুটবল উন্মাদনায় সবাইকে ভাসতে দেখা গেছে। জনপ্রিয় দলের পাশাপাশি প্রায় খেলাগুলো বড় পর্দায় দেখার সুযোগ রাখা হয়েছে এখানে। যারা এখানে এসে খেলা দেখেন তাদের অনেকের ভাষ্য, এখানে বসে খেলা দেখলে স্টেডিয়ামের মতোই মনে হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ছিল ব্রাজিল সার্বিয়ার প্রথম ম্যাচ। তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই। খেলা শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগ থেকেই অনেকে বড় পর্দায় প্রিয় দলের খেলা দেখতে ভীড় জমান সেখানে। খেলা কাতারে হলেও বাংলাদেশে এর উন্মদনার কমতি নেই এতোটুকুও। প্রিয় দলের খেলা কোথায় বসে দেখা হবে তা এরই মধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন সমর্থকরা। তবে বিশ্বকাপ উন্মাদনা কি আর ঘরে বসে হয় তাইতো বড় পর্দায় খেলা দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন শতশত ফুটবলপ্রেমীরা। যেমনটি বলছিলেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে বড় পর্দায় খেলা না দেখলে বিশ্বকাপের মজাই থাকে না। প্রতিবারই আমরা বন্ধুরা মিলে খেলা দেখি। এবারও প্রিয় দলের সবগুলো খেলা এখানেই দেখবো।
আয়োজকরা জানান, আমাদের এখানে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ যেন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে উম্মুক্ত স্থানে বসে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপভোগ বা দেখতে পারেন সে জন্যই এসকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর আগে থেকেই আমরা এই প্রোজেক্টরে মাধ্যমে প্রতি বিশ্বকাপ খেলা গুলো উপভোগ করে থাকি। তবে এ আয়োজন বিশ্বকাপ খেলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকবে। আয়োজক কমিটির মূল উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সবাই একসাথে বসে বড় পর্দায় খেলা দেখার মজাই আলাদা। এজন্য বড়পর্দায় খেলা দেখতে বিশাল এই প্রজেক্টর লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীরা একসঙ্গে বিশ্বকাপের খেলা উপভোগ করেন। তাই এমন মুহূর্তে নিজেদের শামিল করতে শহরের আশপাশের অনেকেই প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন। এদের মধ্যে কম বয়সীদের পাশাপাশি থাকেন বয়স্করাও। প্রিয় দল যখন গোল দেয় তখন করতালি ও নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। অনেক দর্শনার্থী প্রিয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে ও হাতে পতাকা নিয়েও হাজির হয় এখানে। তবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের খেলার দিন দর্শকের সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। খেলা দেখতে আসা মিরাজ বলেন, বন্ধুদের হৈ-হুল্লোড় ছাড়া খেলা জমে না। বিশ্বকাপ খেলা কোথায় দেখবো দ্বিধায় ছিলাম। কিন্ত এখানে এসে বড় প্রজেক্টরে খেলে দেখতে পেরে খুবই আনন্দিত আমরা। এদিকে খেলা দেখতে আসা আরেক ফুটবলপ্রেমী রবিউল ইসলাম বলেন, বড় পর্দায় খেলা দেখায় কী যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মনে হয় যেন গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছি। এ ধরনের ভালো আয়োজনের জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয় আয়োজকদের।।