জারি গানে দেশসেরা জাতীয় পর্যায়ে বগুড়ার তাহিয়ার তৃতীয় সাফল্য
বগুড়া অফিস:
“গান গাই আমার মনরে বুঝাই, মন থাকে পাগলপারা। আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া-গান ছাড়া…” শাহ্ আব্দুল করিমের গানের লাইনগুলো যেন তাহিয়ার জীবনের সারাংশ। বগুড়া মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাশসারাত মুসতারী তাহিয়া। এবার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ এ জারি গানে ‘ক’ গ্রুপে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশসেরা হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাহিয়া ও তার দল। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ের আটটি দলকে পেছনে ফেলে সেরা জারি দলের পুরস্কার পায় তার দল। এছাড়াও জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ ও ২০২৩ এ পরপর দুইবার ২য় স্থান অর্জন করেছেন তারা।
তাহিয়ার দাদার বাড়ি গাইবান্ধায় হলেও তার জন্ম এবং শৈশব কেটেছে বগুড়ায়। বগুড়া সদর উপজেলার কাটনারপাড়া এলাকার আহসান হাবীব ও রেহানা জেসমীন দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তাহিয়া ছোট। শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে ওঠা। ২০১৪ সালে তার বয়স যখন ৩ বছর, তখন থেকেই শুরু হয় সঙ্গীত চর্চা। শুরুর দিকে সঙ্গীতের হাতেখড়ি ছিলেন ওস্তাদ আব্দুর রব।
কথায় আছে- ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। তাহিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম না। গান ছাড়াও নাচ ও কবিতা আবৃত্তিতে বেশ দক্ষ। গানের সাথে সাথে স্কুলে ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ ও কবিতা আবৃত্তি করতেও দেখা যায় তাহিয়াকে। পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চাও তার জীবনের এক অনুসঙ্গ । এ বয়সে সে জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক অর্জন করেছে।
জারি গানে দেশসেরা হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মাশসারাত মুসতারী তাহিয়া বলেন, “খুবই ভালো লাগছে। জারি যেহেতু দলীয় গান এখানে আমার সহপাঠীরাই আমার সাথে আছে। তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করে। এই দল ছাড়া আমি আসলে কিছুই না। আমরা গত দু’বছরও জারি গান করেছি এবং পরপর দু’বার প্রথম রানার্স আপ হয়েছি। তবে চ্যাম্পিয়নের স্বাদটা আমাদের কোনোদিনই গ্রহণ করা হয়নি। সেই হিসেবে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুবই ভালো লাগছে। একদম অন্যরকম একটা অনুভূতি। স্কুলের সকল শিক্ষক আমাদের সাপোর্ট করেছে। এজন্যই হয়তো আমরা এই পর্যায়ে।”
জারি গান কেন ভালো লাগে? এমন প্রশ্নের জবাবে তাহিয়া বলেন, “জারি গানটি অন্য গানের তুলনায় ভিন্ন। জারি গান আমাদের ঐতিহ্য। এই গানের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি খুব সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করা যায়। ২০২২ সালে যখন আমি প্রথম জারি করি, তখন আমি জারিতে একেবারেই নতুন। উপজেলা এবং জেলায় যখন প্রথম হলাম, তখন জানতে পারি আজিজুল হক কলেজের বাপ্পি ভাইদের দল পর পর দু’বার জারিতে চ্যাম্পিয়ন। যেহেতু বাপ্পি ভাই আমাকে অনেক ছোট থেকে চিনতেন, তাই বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বাপ্পি ভাইয়ের পরামর্শ চাইলাম। তারপর যখন জাতীয় পর্যায়ে আমি প্রথমবার বাপ্পি ভাইয়ের নির্দেশনায় ২য় হই, তখন থেকেই জারি প্রতি আরও ভালোলাগা কাজ করে।”
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তাহিয়া বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চা যেহেতু অনেক আগে থেকে করছি, অবশ্যই নিজেকে অনেক ভালো একটা পর্যায়ে দেখতে চাই। আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে চাই। সবাই যেমন বলে- আমি বড় হয়ে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবো। আমার সেই ইচ্ছেটা একটু কম। আমার ভালো লাগে সংস্কৃতির মধ্যে থাকতে। খুব ভালো লাগে গান করতে। আমার খুব ইচ্ছে আমি বড় হয়ে শান্তি নিকেতনে পড়বো।”