শিশু কিশোরদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে স্মার্ট ডিভাইস

ডেস্ক রিপোর্ট:

আজকের যুগে স্মার্টফোনসহ একাধিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু শিশু কিশোরদের বিকাশের ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিভাইসের স্ক্রিন টাইম বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে প্রামাণ্য গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের গুরুত্ব বাড়ছে।

আজকের শিশু কিশোরেরা আসলেই গিনিপিগ। তারাই প্রথম প্রজন্ম হিসেবে স্মার্টফোন নিয়ে বড় হচ্ছে। নতুন গবেষণা অনুযায়ী সেটা কিন্তু মস্তিষ্কের ওপর ভয়াবহ প্রভাব রাখতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এর কারণ কী? এর কোনো প্রতিকারই বা আছে কি? আসলে টেলিভিশন যখন থেকে আমাদের বসার ঘরের দখল নিয়েছে, তখন থেকেই শিশু কিশোরদের বিকাশের ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিভাইসের স্ক্রিন টাইমের প্রভাব নিয়ে চর্চা চলছে। কিন্তু আজকাল চারিদিকেই পর্দা ছড়িয়ে রয়েছে। আজকের স্মার্ট ডিভাইসগুলো টেলিভিশনের তুলনায় অনেক বেশি নিবিড় অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয়। সেগুলো আমাদের পারিপার্শ্বিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে।

এক সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম মা-বাবা ও শিশু কিশোরদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। শিশু কিশোরদের যত বেশি সময় ধরে পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের কথা বলা, কথা শোনা ও সংলাপের প্রবণতা ততই কমে যায়। সেটা তাদের মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। কারণ কগনিটিভ, সামাজিক ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য ভাষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব কম বয়স থেকেই তা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ নির্ণয় করে।

অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা এক অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারা প্রায় ২০০ শিশু বেছে নিয়ে প্রথমে ১২ মাস থেকে ৩৬ মাস বয়স পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তারা প্রত্যেকটি শিশুর জামায় বিশেষ রেকর্ডিং ডিভাইস লাগিয়েছিলেন। তার মাধ্যমে শিশু ও তাদের মা-বাবার কণ্ঠ ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে আশপাশের গ্যাজেটের শব্দও ডিভাইসে ধরা পড়েছে।

শিশুদের যখন ১৮ মাস বয়স হলো, তখন দেখা গেল যে তারা প্রতি বাড়তি মিনিটের স্ক্রিন টাইমের কারণে একটি করে কম মৌখিক শব্দ সৃষ্টি করছে। দুই বছরের মধ্যেই শিশুরা সাধারণত আরো জটিল সংলাপ শুরু করে দেয়। এই গবেষণায় অংশ নেয়া শিশুরা দুই বছরে পা দেয়ার পর দেখা গেল, যে প্রতি দুই মিনিট স্ক্রিন টাইমের কারণে তাদের সাথে তাদের মা-বাবার একটা করে পুরো সংলাপ বাদ পড়ছে।

তবে তিন বছরের মাথায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব চোখে পড়ে। সেই বয়সের মধ্যে তাদের স্ক্রিন টাইম ছিল দিনে গড়ে তিন ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রতি মিনিটের স্ক্রিন টাইমের কারণে তারা মা-বাবার কাছ থেকে প্রায় সাতটি করে কম শব্দ শুনেছে। প্রতি মিনিটের স্ক্রিন টাইমের কারণে শিশুরা নিজেরাও পাঁচটি করে কম শব্দ সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে মা-বাবার সাথে একটি করে সংলাপও কমে গেছে। এই অবস্থাকে ‘টেকনোফিয়ারেন্স’ বলা হয়।

এ পর্যন্ত এই বিষয়ে গবেষণা মা-বাবার দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি শিশুদের কাছ থেকেই নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হলো। ডিজিটাল ডিভাইস যে বাসায় মুখোমুখি সংলাপ কমিয়ে দেয়, এতকাল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী তা শুধু অনুমান করা হয়েছে।

অনেক মানুষ, বিশেষ করে কর্মরত মা-বাবার কাছে স্মার্টফোন শিশুদের শান্ত রাখা ও তাদের মনোরঞ্জন করার হাতিয়ার মনে হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এই মনোভাবের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। আজকালকার শিশুদের অবশ্যই ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার শিখতে হবে। আধুনিক যুগে টিকতে হলে এমন অত্যাবশ্যক টুলের প্রয়োজন। শিশুদের এমন ডিভাইসের স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে তিনটি পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

প্রথমত, আপনি যখন আপনার শিশুসন্তানের সাথে সময় কাটাবেন, খুব প্রয়োজন না হলে স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না। এমনকি তাদের বয়স খুব কম হলেও তাদের কাছে আসতে দিন। দ্বিতীয়ত, আপনার সন্তানের স্ক্রিন টাইমের ওপর নজর রাখার চেষ্টা করুন। তাদের বয়স একটু বাড়ার পর তাদের অনলাইন কার্যকলাপও জানার চেষ্টা করুন। তৃতীয়ত, শিশুদের সাথে যৌথভাবে অনলাইনে তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করুন। এভাবে আরো সংলাপের মাধ্যমে স্ক্রিন টাইমের নেচিবাচক প্রভাব কিছুটা কমানো যায়।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *