কালাইয়ে গ্রীষ্মের তাপদাহে বাড়ছে তালের শাঁসের চাহিদা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের কালাইয়ে তীব্র তাপদাহে গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন।আর ভ্যাপসা গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে ভিড় করে মানুষ তালের শাঁস খাচ্ছে। কারণ কচি তালের শাঁস যেমন পুষ্টিকর, তেমনি রসালো ও প্রশান্তি দায়ক।এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সুস্বাদু তালের শাঁস বিক্রির চাহিদা প্রচুর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় এ সময় তালের শাঁস বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছেই বেশ জনপ্রিয় উঠছে।আর তালের এমন কদর বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন মৌসুমী ক্ষুদ্র তাল ব্যাবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার(৬ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের পসরা সাজিয়ে বসেছে মৌসুমী বিক্রেতারা।এই ভ্যাপসা গরমে একটু স্বস্তি পেতে ক্রেতারাও আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছেন তালের শাঁস। আবার অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন রসালো এ ফল। মৌসুমী ফল হিসেবে তালের শাঁস অবদান রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।

কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকার তালের শাঁস বিক্রেতা মোঃমোতালেব হোসেন বলেন,উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি কিনে ভ্যানগাড়ী,ভটভটি করে বাজারে আনা হয়। প্রতিটি তালের পাইকারি কেনা দাম পরে ৫ থেকে ৭ টাকা। প্রতিটি তাল গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। তীব্র গরম পড়লে তালের শাঁস অনেক বেশী বিক্রি হয়। প্রতি বছর আমি এই মৌসুমে তালের শাঁস বিক্রি করে থাকি।

কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তালের শাঁস খেতে আসা রাইহান বলেন,তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেতে ভালোই লাগে। এবারের প্রচণ্ড দাপদাহে বেড়েছে তালের শাঁসের চাহিদা।এগুলো খেতে নরম ও সুস্বাধু এবং শরীরের জন্য খুবই পুষ্টিকর।

এ উপজেলার পাচঁশিরা বাজারে তালের শাঁস বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন,কেউ বলে তালের শাঁস,কেউ বলে তালের চোখ আবার কেউ বলে তালের থলথলি।একটি তালে দুটি বা তিনটি শাঁস থাকে।গরমের সাথে সাথে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি বছর বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে জ্যৈষ্ঠের শেষপর্যন্ত তালের শাঁস বিক্রি করি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৫০০ তালের শাঁস বিক্রি করা হয়। সারাদিন তালের শাঁস বিক্রি করে যে টাকা আয় হয়,তা দিয়ে সংসার ভালো মতোই চলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা অরুণ চন্দ্র রায় জানান, তাল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল।সাধারণত সড়কের দু’পাশে ও বিলের মাঝখানের আইলে তাল গাছ বেশি দেখা যায়।তাল গাছ আমাদের ভূমিক্ষয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রকৃতিতে তাল গাছ টিকিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে প্রতি বছর তাল পাকার পর বীজগুলো সংগ্রহ করে চারায় রূপান্তর করে বিভিন্ন স্থানে রোপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সল নাহিদ পবিত্র বলেন, কচি তালের বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তীব্র তাপদাহে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে গেলে তা পুরণ করার পাশাপাশি তালের শাঁস দ্রুত শীতল করে। তাছাড়া তালের শাঁস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থও বের করে দেয়।এই গরমে সবারই তালের শাঁস খাওয়া উচিৎ বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *