পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এর জীবন যুদ্ধ চলে ভ্যানের প্যাডেলে স্বীকৃতি সনদ আজো মেলেনি

পার্বতিপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

লুঙ্গি পেঁচিয়ে পরে শক্ত হাতে অস্ত্র ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সেদিন তো ফুলপ্যান্ট   পরনে ছিল না এখন কেন জাতীয় মুক্তি যোদ্ধা কাউন্সিলে প্রবেশ করতে এসে ফুলপ্যান্ট ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না? মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদ পত্র প্রাপ্তীর  জন্য  জামুকায় গিয়ে এমন বিড়ম্বনার শিকার  মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল  মালেক ।

দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার খাগড়াবন্দ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এর জীবিকা নির্বাহ হয় ভ্যানের চাকায়। ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর  অনলাইনে মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে গেজেট ভুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি যার ডিজিআই নং১০২৮৭৩( DGl102873) এবং পার্বতীপুর উপজেলার ক্রমিক নম্বর ০৩। মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সাময়িক মুক্তি যোদ্ধা সনদ প্রাপ্তীর আবেদন করেছেন যার আবেদন ডকেট নং ৪৮৯২ তারিখ ০৮/১১/১৪ইং।   মুক্তি যোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত তালিকা পার্বতীপুর ক্রমিক নম্বর ৫৫।

এতো দালিলিক প্রমাণাদী আগলে রেখে ও  মুক্তি যোদ্ধার তালিকায় তার নাম গেজেট ভুক্ত হয় নাই । তথাপি অপ্রতিরোধ্য  প্রত্যাশায় ভ্যানের চাকায় জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে  মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল মালেকের। জানা গেছে পার্বতীপুর উপজেলার  ১০ নং হরিরামপুর ইউনিয়নের খাগড়াবন্দ গ্রামের মৃত্যু নাজিম উদ্দীনের  পুত্র আব্দুল মালেক ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মাতৃভূমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান  কে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার দের কবল থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতের ৭ নং সেক্টরের উত্তর অঞ্চল  হামজাপুর ( পথিরাম)ইয়থ ক্যাম্পে ১ লা জুন  ১৯৭১ যোগদান  করেন  এবং  উক্ত ক্যাম্পে   একমাস প্রশিক্ষন গ্রহন শেষে  হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমবাড়ী ফুলবাড়ি  ভবানীপুর আনন্দ বাজার বদরগনজ  যুদ্ধে  অংশ নেন। তার এফ এফ নং ১১৭১।  তার  প্রকৃত সহযোদ্ধা  মোঃ কায়ছার আলী গেজেট নং ৬৩৯ লালমুক্তি বার্তা নং ০৩১৩০৩০০৭২ (০১৭২১২১৫৮৪০) মোঃ আজিজুল হক গেজেট নং ৫৮৭ লাল মুক্তি বার্তা নং ০৩১৩০৩০০৪৪  (০১৭৮৫৩৭৬১৪৭) মোঃ আঃ লতিফ গেজেট নং ৬২৮ লাল মুক্তি বার্তা নং ০৩১৩০৩০০৩৯ (০১৭৮৩৩৭৬৪৪৬) মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে গেজেট ভুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।   মুক্তি যুদ্ধ কালীন সময়ে তিনি ৭ নং সেক্টরে থ্রি নাট.  থ্রিজি ৩০৩ রাইফেল পরিচালনা করেন।  যুদ্ধ কালীন সময়ে তার  অধিনায়ক ছিলেন এম এ জি ওসমানী  এবং কমান্ডার কাজী নুরুজ্জামান ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পন করেছিলেন তিনি। এলাকার মুক্তি যোদ্ধা মরহুম মোতালেব মন্ডল এবং সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন ও তার সহযোগী ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেওয়ার  পরের দিন  দিনাজপুর মিলিশিয়া ক্যাম্পে  গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়  ভর্তি হয় এবং  ২৫ শে জানুয়ারী ১৯৭২ তিনি ন্যাশনাল মিলিটারি ট্রেনিং একাডেমি রাজশাহী সদর রাজশাহী এর কমান্ডেন্ট ডিএস ডিললোন ( ক্যাপ্টঃ)তাকে ছাড়পত্র প্রদান করেন।  মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল  মালেক  মাসিক ৫০ টাক  সহায়তা অনুদানে তথ্য দাতা হিসাবে বামনহাট ইয়ুথ রিসিভসন ক্যাম্প কুচবিহারে  ০৩ /০৫/৭১ ইং হতে ২৬/৫/১৯৭১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মর্মে কাস্টমস অফিসার ইনচার্জ ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্প বামনহাট কোচবিহার দিনহাটা কর্তৃক স্বাক্ষরিত অর্ডার শিটে উল্লেখ আছে। মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল মালেক জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেওয়ার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ  অবস্থায় দিনাজপুর সদর মিলিসিয়া  মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকায় হাসপাতাল থেকে ফিরে দেখেন তার নাম বাদ গেছে। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে আবেদন করেছেন তিনি দৃঢ় আশাবাদী মুক্তি যোদ্ধা তালিকায় তার নাম অবশ্যই গেজেট ভুক্ত হবে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *