জেগে উঠেছে জয়পুরহাটের কামারপাড়া
অনলাইন ডেস্ক:
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেগে উঠেছে জয়পুরহাটের কামারপাড়াগুলো। সারাবছর তেমন কাজ না থাকলেও এখন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার কারিগররা। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাতুরি পেটার টু-টাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া। তবে কামাররা বলছেন, লোহার তৈজসপত্রের কাঁচামাল, কয়লার দাম বৃদ্ধি ও চীনের আধুনিক প্রযুক্তির তৈজসপত্রের চাহিদায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে তাদের। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান এ শিল্পের মানুষরা।
জানা গেছে, গত ৪/৫ বছর আগেও জয়পুরহাট জেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ কামার পেশায় জড়িত ছিলেন। তবে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। তারা অনেকেই কষ্ট করে ধরে রেখেছেন বাপ দাদার এ পেশা। কামার কারিগররা অভিযোগ, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এতিহ্যবাহী এই পুরনো শিল্প। এছাড়া দফায় দফায় কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে তারা। এদিকে কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখনও তেমন বেচাকেনা জমেনি। হয়তো শেষ মুহুর্তে বিক্রি বাড়বে বলে আশা তাদের।
জয়পুরহাটের বিভিন্ন কামারপাড়াতে এবার ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি ছুরি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, চাপাতি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। দা ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, জবাই করার ছুরি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার এসবের দাম অনেক বেশি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ বাজারের কামার দুলাল বলেন, ‘চীনের প্রোডাক্ট এসে আমাদের পেশা অচল হয়ে গেছে। আমাদের বাপ-দাদার ব্যবসা তাই ছাড়তেও পারিনা। সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করতো তাহলে ভাল হতো।’
আনন্দ নামে এক কর্মকার বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা এখন খুব একটা ভাল নাই। লোহা ও কয়লার দাম গতবছরের চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য সারাবছর লোকসান গুনতে হয়। ঈদ আসলেই শুধু একটু বেচাকেনা হয়। এ নিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে।’
কালাই উপজেলার পুনট বাজারের নির্মল বলেন, ‘গত বছর আমরা ১ মাস আগে থেকে ভাল বিক্রি করেছি। কিন্তু এ বছর তেমন বেচাকেনা হচ্ছেনা। ঈদের আগ মুহুর্তে হয়তো ক্রেতারা আসবেন।’
দুর্গাদহ বাজারে ছুরি কিনতে এসেছিলেন হরিপুর গ্রামের ফরিদ নামে একজন। তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার পশু কাটার অস্ত্রের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। এখন কোরবানির জন্য প্রয়োজন, তাই কিনতেই হবে।’
দোয়ানীঘাট থেকে আসা পলি বেগম নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের জন্য একটি বটি কিনতে এসেছিলাম। ৩১০ টাকা দাম নিয়েছে। দাম বেশি হলেও তো কিনতেই হবে কোরবানির জন্য।’
জয়পুরহাট বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের কামারেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সহযোগীতা করা হবে।’