প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের ভিতর দিয়ে এলজিইডির পাকা সড়ক

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের ধনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে পাকা রাস্তার কার্পেটিং নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এই পাকা রাস্তা নির্মাণের ফলে ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের পড়তে হবে মৃত্যু ঝুঁকিতে। একে তো ওই বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নেই। খেলার মাঠটিও সরু পূর্ব পশ্চিম লম্বা। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে একটি বিশাল গভীর পুকুর। অনতিবিলম্বে এলজিইডি অফিস কর্তৃক এই রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেয়ার জন্য জোড় দাবী জানিয়েছেন ধনতলা গ্রামবাসী।

সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের ধনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ৩৫ ফিটের বেশি চওড়া নয়। এই ৩৫ ফিটের মধ্যে ১০ ফিট দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে স্কুলের বারান্দা ঘেঁষে। শিশু শ্রেণির ক্লাসের সামনে দিয়ে। চলন্ত গাড়ীর নিচে পড়ে শিশুদের মৃত্যুর ভয় থাকছে। এই রাস্তা করার ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের খেলার মাঠ আর কোন মাঠ থাকলো না। হয় পাকা রাস্তার উপর খেলতে হবে না হলে দক্ষিণ পার্শ্বে স্কুলের মাঠের শেষেই গভীর পুকুর। রাস্তার পার্শ্বে মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে খেলতে গেলে পুকুরে পড়ে কোমলমতি শিশুদের মৃত্যু হতে পারে।

জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলায় রয়েছে মোট ৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোন বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের মধ্য দিয়ে এ ধরনের এলজিইডির পাকা সড়ক নাই। বিদ্যালয়ের ভবন সহ খেলার মাঠটি সংকীর্ণ পূর্ব-পশ্চিম লম্বা। এরই মধ্যে ওই গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তি স্বার্থ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের মধ্য দিয়ে এলজিইডি কর্তৃক বরাদ্দ নিয়ে পাকা কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।

নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, আমাদের ধনতলা গ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবার তার নিজের স্বার্থে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ খেলার মাঠের ভিতর দিয়ে এলজিইডির পাকা রাস্তা নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে স্কুলের খেলার মাঠ খুঁড়ে পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলাম ও তার ভগ্নিপতি মনোয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের স্বার্থে এই সড়ক স্কুলের ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা নিয়ে যাচ্ছে। মনোয়ার হোসেনের রয়েছে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা। যেন তার গাড়ী সহজে তার বাড়ির দুয়ার পর্যন্ত যায়। কয়েক বছর আগে সে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে স্কুলের ভিতর দিয়ে রাস্তা নেয়। এবার কৌশলে ১০ ফিট পাকা রাস্তা স্কুলের খেলার মাঠের ভিতর দিয়ে নিচ্ছেন।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জানান, র‌্যাম্প দিয়ে সহজেই যেন মোটরসাইকেল বারান্দায় তোলা যায় এ জন্য এলজিইডি কর্তৃক বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি জহুরুল ইসলামও একই কথা বলেন।

তারা আরও জানান, ব্যক্তি স্বার্থে এ রাস্তার নির্মাণ করা হচ্ছে যা স্কুলের ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ হবে না। শিশুদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। খেলতে গেলে শিশুরা হয় গাড়ীর নিচে পড়বে না হলে পুকুরে পড়ে মারা যাবে। এরকম স্কুলের মাঠের ভিতর দিয়ে রাস্তা কোন স্কুলেই নেই।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম খাতুন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের স্বার্থে এই পাকা রাস্তা বরাদ্দ পেয়েছি। এতে আমাদের উপকার হবে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহরুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি নিরব থাকে।

এব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা প্রকৌশলী রিপন কুমার সাহা জানান, আমি ধনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরজমিনে যাই নাই। আমি সরজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি দেখব।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নাই বা কেউ অভিযোগও দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *