দল-ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার : বগুড়ায় আমীরে জামায়াত
বগুড়া অফিসঃ
ফ্যাসিবাদমুক্ত বৈষম্যহীন তারুণ্যনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে আমীরে জামায়াত জননেতা ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, দল-ধর্ম যার যার, এই বাংলাদেশ সবার।
শনিবার বিকেলে বগুড়া শহর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তিনি একথা বলেন।
অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া জামায়াতের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা যাঁদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেইসব শহীদ এবং আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা এখন আমাদের প্রথম এবং নৈতিক দায়িত্ব। এজন্য দল-মত ধর্ম নির্বিশেষে সকল শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমরা। এখন আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।
বগুড়া শহর জামায়াতের নবনির্বাচিত আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিতে ও অধ্যাপক আ.স.ম আব্দুল মালেক,মাওলানা মানছুরুর রহমান এবং মঞ্জুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সূধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী।
বগুড়ায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের বগুড়া অঞ্চলের আঞ্চলিক টিম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহিম,বগুড়া পূর্ব জেলা আমীর অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর শাহিনুর আলম, জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের আমীর ডা: ফজলুর রহমান সাঈদ, বগুড়া শহর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আলমগীর হোসাইন, বগুড়া জেলা পশ্চিমের নায়েবে আমীর আব্দুল হাকীম সরকার, বগুড়া জেলা পূর্ব জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল বাসেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক, বগুড়া শহর শিবিরের সভাপতি রেজওয়ান ইসলাম, বগুড়া পূর্ব জেলা শিবিরের সভাপতি জোবায়ের আহমেদ,পশ্চিম জেলা সভাপতি সাইয়্যেদ কুতুব সাব্বিার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
লাখো জনতার সূধী সমাবেশে আমীরে জামায়াত বলেন,ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে আমাদের ২জন আমীরে জামায়াতসহ ১২ জন শীর্ষ নেতাকে শহীদ করেছে। অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে আমাদের দলের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নিয়েছে।বুলডোজার দিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। গুম-খুন হামলা-মামলায় ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ও আয়না ঘরে বন্দী করেছে । শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ জুলুম অত্যাচারের সীমা লংঘন করছে। এর পরিনতিতে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে অসহায় কর্মী-সমর্থকদের বিপদে ফেলে রেখে নেতারা ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
আমীরে জামায়াতে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের দোসর পলাতক বাহিনী যেখানেই থাকুক না কেনো তাদের ধরে এনে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এমন শাস্তি দেওয়া হবে,যাতে বাংলার মাটিতে আর কোন দিন কোন ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরের ভারতের তাবেদার, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে গণতন্ত্র হত্যা এবং বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্রক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন,জামায়াত দেশের ক্ষমতায় গেলে হিন্দু-মুসলিম সবাই সমান অধিকার ফিরে পাবে,শান্তিতে থাকতে পারবে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েমের মাধ্যমে কাংখিত সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি,সেখানে আর কোন ফ্যাসিবাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই।
এর আগে সকালে বগুড়া শহর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে শহর জামায়াতের নবনির্বাচিত আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি আমীরে জামায়াত উপস্থিত হাজার হাজার রুকনের (সদস্য) সামনে রুকনদের গোপন ব্যালটের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত শহর আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকারকে সংগঠনের সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী শপথ প্রদান করেন।
সকাল ৯টায় অনুষ্ঠতি রুকন সম্মলেনে দরসে কুরআন পেশ করেন বগুড়া পশ্চমি জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার এবং প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ.স.ম আব্দুল মালেক।