বগুড়ায় লাগামহীন আলুর দাম

বগুড়া অফিস:

উত্তরাঞ্চলের যে সব জেলায় আলুর উৎপাদন হয় তার মধ্যে বগুড়া অন্যতম। বগুড়ার মাটি বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির হওয়ায় আলুর উৎপাদন হয় বেশি। এ কারণে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বগুড়ার কৃষকরা আলু চাষ বেশি করেন। চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় ৫৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিলো। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকরা বলছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতো আলু উৎপাদন হয়নি।

আগের মৌসুমে আলুর দাম অতিরিক্ত বেশি হওয়ার কারণে আগাম আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো কৃষক। আর আগাম চাষ করা আলু থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদনের কথা বলা হয়, আগাম আলু সে পরিমাণ হয়নি। এমনকি তার অর্ধেকও হয়নি। এ কারণে মৌসুম শেষে হিসেব মিলছে না।

সরেজমিনে বগুড়ার পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, কোল্ড স্টোরেজের থেকে আলু বের হওয়ার পর থেকে বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত তিন সপ্তাহ আগে, কোল্ড স্টোরেজে আলুর দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, যা খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে কোল্ড স্টোরেজ থেকেই আলু কিনতে হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৩ টাকায়, আর খুচরা বাজারে তা ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বীজ আলুর দাম বৃদ্ধি—বিশেষ করে বিএডিসি সহ অন্যান্য বীজ আলু ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে বগুড়ার ৪২টি কোল্ডস্টোরের ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন হলেও আলু মজুদ করা হয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৭১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন আলু কম মজুদ হয়েছে। আলু কম মজুদ হওয়ায় শুরু থেকেই আলুর বাজার চড়া করে রেখেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে ব্যবসায়ীরা।

চলতি বছরের জুন মাস থেকে আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করা শুরু হয়েছে। জুন মাসে কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে ৬০ হাজার ২৩৯ মেট্রিক টন, জুলাইতে ৩১ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন, আগস্টে ২৫ হাজার মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বরে ১৭ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন এবং অক্টোবর মাসে খাবার আলু ২৭ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন এবং বীজ আলু ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বাজারে এসেছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বগুড়ার ৪২টি কোল্ডস্টোরেজ থেকে খাবার আলু ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন এবং বীজ আলু খালাস হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন।

এখনো স্টোরে খাবার আলু মজুদ আছে ৩৩ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন এবং বীজ আলু ৬৩ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন। ১৫ নভেম্বর বগুড়ার প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজে শীতলীকরণ যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়ায় কথা জানা যায়। এর পর আলু ব্যবসাযীরা আরও সপ্তাহ খানেক আলু সেখানে রাখতে পারবেন। এ কারণেই ব্যবসায়ীদের আলু বের করার কোন তাড়া নেই। ধীরে ধীরে বের করবেন দাম বেশি পাওয়ার আশায়।

বগুড়া স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের মালিক অহিদুল আলম জানান, প্রতিকেজি আলুতে এ বছর গড়ে লাভ হয়েছে ২৫ টাকা। প্রতিকেজি আলু কোল্ডস্টোরেজ পর্যন্ত যেতে খরচ হয়েছে স্থানভেদে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। আর আলু স্টোরেজ গেটে বিক্রি হয়েছে গড়ে প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতিকেজিতে লাভ করেছে ১৬ থেকে ২৭ টাকা। এ হিসেবে স্টোরে রাখা ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন আলু থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেছে ৮শ কোটি টাকার বেশি।

রাজাবাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, বগুড়ায় প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়। যার কারণে এই জেলায় আলুর সংকট হওয়ার কথা না। কিন্তু বাজারকে অস্থিতিশীল করতে এবং অধিক মুনাফার আশায় কিছু সিন্ডিকেট কাজ করছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *