অসহায় নারীর আকুতী ৫৩ বছরেও হলোনা শহীদ ভাতা

নওগাঁ (বদলগাছী) প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালে যুদ্ধে পিতা হারা এক অসহায় নারীর আকুতি। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ৩ নং পাহাড় পুর ইউনিয়ন মৌজা পাঁচ ঘরিয়া কসবা গ্রামের মরহুম ইব্রাহিম মন্ডলের পুএ আঃ খালেক মন্ডল, বিবাহের এক বছর পরেই ৭১ এর যুদ্ধ শুরু, গর্ভে ৬ মাসের সন্তান সব মায়া মমতা ত্যাগ করে চলে গেলেন যুদ্ধে। মায়ার টানে বাড়িতে ফিরে মায়ের মায়ার জালে একটু দেরি, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির চার দিকে পাক-হানাদার বাহিনী বাড়িতে প্রবেশ করে চোখে কাপড় বেধে নিয়ে যান জাবারীপুর নদীর বাঁধে। সেই খানে বড়ই এর গাছে বেঁধে বেপক নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছিলেন আঃ খালেক কে । গর্ভধারীনি স্ত্রী আনোয়ারা বেগম চলে গেলেন আক্কেল পুর উপজেলার মাতাপুর হাজী ইচাহাক আলী পিতার বাড়ি। সেখানে জন্ম নেন মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ খালেকের ঔরসজাত সন্তান কণ্যা মাছুমা আক্তার, নানা নানির কাছে লালিত পালিত মাছুমার এক বছর বয়স হলে মা আনোয়ারা বেগম আবার ও অন্যএে বিয়ে হলে নানার বাড়িতেই শৈশব কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পদার্পণ করলে অসহায় গরীব খেটে খাওয়া পরিবারে বিয়ে দিলেন নানা।

পিতা হারা, মা একপ্রকার হারা জীবনে পিয়ারীর মত ধরেন সাংসারিক হাল।খায়ে না খেয়ে জমি আদী বর্গাচাষ করেন মাথা লুকানোর ঠাই।এর পর দাদী চাচা, খালা, খালু, ও মামার মূখে শুনেন যুদ্ধে হারানো বটগাছ পিতা আঃ খালেকের জীবন ইতিহাস।

 

চোখের জলে ভেসে উদিত হয় বুক ফাটা কাঁন্না। ছুটে যান ওয়ারিশগনের কাছে জানতে চান বাবার কথা,দেখতে চান বাবার ছবি, কিন্তু নেই কিছু প্রমাণ। আছে শুধু ওয়ারিশদের হিসাবে ৬২ / ৭২ সালের খতিয়ানে আঃ খালেক। পিতা আঃ খালেকের একমাত্র ঐরস জাত কণ্যা মাছুমা মর্মে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট প্রদান করেন ততকালীন ৩ নং পাহাড় পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজাউল ইসলাম হকো, পরে গত ১৮/৩/৯৮ ইংরেজি তারিখে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন ওয়ারিশান প্রদানকরেন। মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ খালেক ৭১ সালে শহীদ হয়েছেন মর্মে গত১৬/১০/২২ইং তারিখে প্রত্যায়নপএ প্রদান করেন ৩ নং পাহাড় পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ খালেককে ৭১ সালে যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে প্রত্যয়ন পএ প্রদানকরেন।এবং নওগাঁ ৪৮/০৩ মাননীয় সাংসদ সদস্য ছলিমদ্দীন তরফদার সাবেক এমপি যাচাই বাছাই করে সঠিক তথ্য সংগ্রহ পূর্বক গত ২৯/১০/২৩ ইং তারিখে শহীদ মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে প্রত্যায়ন পএ প্রদান করেন।

উক্ত জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যায়ন সহ নিউজ কাটিং প্রমাণ সংযুক্ত করে আবার ও গত ২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মহাপরিচালক জাতীয় মুক্তি যোদ্ধা কাউন্সিল বরাবরে পিতা মরহুম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ খালেককে গেজেট ভুক্ত করার আবেদন করেও আজ প্রর্যন্ত কোন স্বাক্ষাতের চিটি পাননি ভুক্তভোগী যুদ্ধে পিতা হারা অসহায় এতিম নারী মাছুমা।

৫৩ বছরের শহীদ দিবসে দৈনিক ইনকিলাবের বদলগাছী উপজেলা প্রতিনিধি কে কাঁন্না জরিত কন্ঠে আক্ষেপ করে জানান। তিনি আরও বলেন আমি ৩০ বছর বয়স থেকে অনেক অনেক মুক্তি যোদ্ধা, নেতাদের কাছে পিতা হারানো কথা বলি সবাই শুনে আফসোস করেন, কিন্তু শহীদের মর্যাদা দিতে চান না।কেন শহীদ ভাতা হলোনা জানতে চাইলে তিনি কাঁন্না কন্ঠে আক্ষেপ করে জানান আমি টাকা যোগান দিতে পারিনি।তাই এই শহীদ দিবস আসলে মনে করি টাকা থাকলে পিতার নামটি শহীদের মর্যাদা দিতে তালিকায় নাম লেখা যেতো।

স্থানীয় এক সাংবাদিকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপরোক্ত প্রমাণ পএিকার নিউজ কাটিং এর মাধ্যমে আবেদন করেও, ৫৩ বছরে এতিম অসহায় শহীদ পরিবারের সন্তান হিসাবে শহীদ ভাতা হলোনা।

অথচ স্বাধীন দেশে প্রথম গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মুক্তি যোদ্ধা তালিকা তৈরি করেন এরশাদ সরকার সেই সময় আমি ছিলাম নাবালক শিশু ।এবং মুক্তি যোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করে ২২ টি শিল্প কারখানা সেই কল্যাণ ট্রাস্টে হস্তান্তর করেছিলেন এরশাদ সরকার শুনেছি কিন্তু আমার ভাগ্যে জোটে না। তবে আর ও কতদিন একজন শহীদের রক্তে জন্মানো এতিম অসহায় নারীর আকুতি এবং আর ও কতটা বছর অপেক্ষায় থাকলে সেই জাতীয় মুক্তি যোদ্ধা কাউন্সিল কমিটির কাছে বিবেচিত হবো বলে তিনি বিনয়ী কাঁন্না কন্ঠে আক্ষেপ করে জানান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *