বগুড়ায় তৈরী হচ্ছে কচুরিপানার নান্দনিক তৈজসপত্র

বগুড়া অফিস:

জলজ আগাছা কচুরিপানার ডাল শুকিয়ে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক ফুলদানি, ফুলের টব, মাদুর,পাপোশ, ঝুড়িসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা সামগ্রী। এই কাজে নিয়োজিত ৩০ জন নারীকে আলোর মুখ দেখিয়েছে বগুড়ার সোনাতলার ‘আলোর প্রদীপ যুব সংগঠন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘর সাজানোর আকর্ষণীয় রকমারি সামগ্রী তৈরির কাজে নিয়োজিত ৩০ জন নারীর মধ্যে রয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কাবিলপুর। এই গ্রামের যুবক মেহেরুল ইসলাম মার্টাস করেছেন ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে এরপর আবার এলএলবি পাশ করেছেন। চাকরি কিম্বা আইন পেশায় না জড়িয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি ২০০৮ সালে তার নিজ হাতে গড়ে তোলা আলোর প্রদীপ যুব সংগঠনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরীর কাজ শুরু করেন। সেই অনুযায়ী বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার স্বপ্নডানা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৩০ জন যুবনারীকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তিনি। প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা কাবিলপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে জন্মানো কচুরিপানার ডাল সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো রোদে শুকানোর পর পেঁচিয়ে দড়ি বানানো হয়। সেই দড়ি লোহার তৈরী ফ্রেমের সাথে গেঁথে তৈরী করা হয় বিভিন্ন সামগ্রী। পরে লোহার ফ্রেম থেকে বের করে সৌন্দর্য বাড়াতে বর্নিশ করা হয়।

নারী ইলমা বেগম, দুলালী বেগম, স্কুল ছাত্রী মমিতা আক্তার, আঁখি আক্তার বলেন, আমরা অবসর সময় বাড়িতে বসে না থেকে এখানে কাজ করে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা উপার্জন করে থাকি। অনেকে আরো বেশী কাজ করে বেশী টাকা আয় করেন। যা দিয়ে কারো লেখা পড়া ব্যয় আবার কেউ ব্যক্তিগত শখ পুরণের পাশাপাশি সংসারের প্রয়োজনে ব্যয় করেন। একেকটি সামগ্রী তৈরীতে প্রকার ভেদে ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন তারা।

কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত প্রতিটি ফুলের টব ২০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ফুলদানি ২৫০ থেকে ৪০০, মাদুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০, ট্রে ২০০ থেকে ৩০০, ফলঝুড়ি ২০০ থেকে ১ হাজার, ডিম রাখার পাত্র ৬০০ থেকে ১ হাজার ১০০, পাপোশ ২০০ থেকে ৩০০, আয়নার ফ্রেম ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০, ডাইনিং টেবিলের ম্যাট ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলোর প্রদীপ যুব সংগঠনের পরিচালক মেহেরুল ইসলাম বলেন, সংগঠনটি অনেক পুরাতন হলেও কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীর কাজ শুরু করা হয় এক বছর আগে থেকে। ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় শপিংমলে এই পণ্য গুলো সরবারাহ করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশের বাহিরেও পাঠানো হয়। তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের সংগঠনে হামলা করে কুচুরিপানা দিয়ে তৈরী করা চার লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৩০০ পিস নানা ধরনের সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এই সামগ্রীগুলো ঢাকায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমার এই সংগঠনের মাধ্যমে কচুরিপানা দিয়ে কাজ করে ৩০ জন নারীকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছি।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সেলিম উদ্দিন বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় বগুড়ার সোনাতলায় আলোর প্রদীপ যুব সংগঠনের মাধ্যমে ৩০ জন বেকার যুব নারীকে হস্তশিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পর তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় কচুরিপানা ও হোগলা পাতা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করছেন। তারা সমাজের তথা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের প্রয়োজনে আমরা সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *