জয়পুরহাটে আলু চাষ করে লোকশানে কৃষকরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

অনলাইন ডেস্ক:

লাভের আশায় জয়পুরহাটে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে আলু তোলা। তবে বাজারে আলু বিক্রি করে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেননা কৃষকরা। দিনদিন আলুর দাম কমায় উৎপাদন খরচও উঠছেনা তাদের। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আলুর চাষ কমে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তাই সরকারের কাছে আলুর ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে অন্যতম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলায় এবার ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ক্যারেজ, ভ্যালেন্সিয়া, এস্টেরিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, বারী-৮৬, পাকরীসহ বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বেশি। বীজ-সারের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে খরচও অনেক বেশী হয়েছে। প্রথমদিকে আলুর দাম একটু বেশি হলেও ধীরে ধীরে দাম কমে যাওয়ায় বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করে লোকশান গুনছেন কৃষকরা। গত তিন সপ্তাহ আগেও আলু ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪২০ টাকায়। আবার কোন কোন দিন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠছে। বর্তমানে আলুর ফলন হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ। বিঘাপ্রতি জমিতে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এভাবে দাম কমায় মোটা অংকের লোকশান গুনছেন চাষীরা। অবিলম্বে আলুর ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সদর উপজেলার কোমরগ্রামের কৃষক রানা হোসেন বলেন, ‘১২০ টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আলুর চাষ করেছি। আলুর বাজার বর্তমান কম হওয়ায় আমাদের অনেক লোকশান হচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি এস্টেরিক জাতের আলু ৪৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। বিঘাপ্রতি জমিতে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ মণ ফলন হচ্ছে।’

পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক মনসুর রহমান বলেন, গত বছর আলু চাষে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। কিন্তু এবার বীজ ও সারের দাম বেশি হওয়ায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী এক বিঘা জমির আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এতে করে লোকশান গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।’

ধারকী গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে এবার ৪ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু দাম এতোটা কম হবে সেটা ভাবতে পারিনি। রোপনের ৬৫ দিন বয়সে আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৭০ মণ করে। দাম কম হওয়ায় সব মিলে ৫০ হাজার টাকার মতো লোকশান হবে।’

কোমরগ্রাম চারমাথার আলু ব্যবসায়ী সামছুল হক বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাটে গ্রানুলা জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকা মণ ও এস্টেরিক জাতের আলু ৪২০ টাকায়। এর একদিন আগেও যা ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ছিল। প্রতিদিন দাম উঠানামা করছে। বর্তমান আমদানী বেশি হওয়ার কারণে আগামীতে এই দাম আরও কমবে বলে মনে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, ‘জয়পুরহাট জেলায় এবার ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আলু রয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। বর্তমানে জেলার ১০ হাজার হেক্টরের মতো আলু তোলা সম্পন্ন হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫০০ মেট্রিক টন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এবার অনেক দেশই বাংলাদেশের আলু নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। সবকিছু মিলে দেশে-বিদেশে এবার আলুর চাহিদা রয়েছে। কৃষকদের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *