আক্কেলপুর মহিলা কলেজ রেলেগেটে বাস-ট্রেন সংঘর্ষ ট্র্যাজেডির ১৯ বছর

অনলাইন ডেস্ক:

দেখতে দেখতে ১৯ বছর পূর্ণ হলো জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজ সংলগ্ন তৎকালীন অরক্ষিত রেলেগেটে ভয়াবহ বাস-ট্রেন সংঘর্ষ ট্র্যাজেডির। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সকাল ৯.৪৫ মিনিটের দিকে খেয়া পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস অরক্ষিত রেলগেটটি অতিক্রম করার সময় সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে মুহূর্তেই বাসটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে, রেললাইনে ছিটকে পড়ে বাসযাত্রীদের ক্ষতবিক্ষত দেহ।

সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ২৫ জন বাসযাত্রী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়  আরও ১০ জনের এবং আহত হন অন্তত ২৫ জন। সেদিন আক্কেলপুর কলেজ মাঠে একসাথে ১১ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সাত দিনের শোক ঘোষণা করে আক্কেলপুর পৌরসভা।

এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (১১জুলাই) সকাল ১১ টায় নিহতদের স্মরণে উক্ত স্থানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের দাবীতে মানববন্ধন করেছে আক্কেলপুর উপজেলাবাসী।

মানববন্ধনে শহীদ পরিবারের সদস্য হামিদ খান জনি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরমান হোসেন কানন, জিয়া সাইবার ফোর্স জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিলন চৌধুরী, শিক্ষার্থী পরিবারের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট, আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মেরিন হোসেন, পৌর ছাত্রদল নেতা অপূর্ব চৌধুরী, আশ্বিন, ফ্রেশ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভয়াল ওই দুর্ঘটনার দিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আক্কেলপুর পশ্চিম আমুট্ট গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ ভাসানী অফিসিয়াল কাজে জয়পুরহাট জেলা শহরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হবার সময় তার আট বছরের নাতি সোহান তার সঙ্গে যাওয়ার বায়না করলে তাকে সঙ্গে নিয়ে আক্কেলপুর বাজার রেলগেট থেকে  জয়পুরহাটগামী খেয়া পরিবহণ বাসে উঠার পর ঘটনাস্থলে ট্রেনটি যখন বাসটিতে ধাক্কা দেয় ভাসানী তখন জানালা দিয়ে তাট নাতি সোহানকে বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিলেও নিজে বাঁচতে পারেননি। সেই ছোট্ট সোহান এখন ২৭ বছরের যুবক। সেদিনের সেই ভয়ংকর স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। আবেগাপ্লুত হয়ে চোখে জল এনে সেই দিনের ভয়াল তিনি স্মৃতিচারণ করেন তিনি। ওই দুর্ঘটনা কবল থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে আজও ভুলতে পারেননি বিভীষিকাময় সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ ফকির জানান, ট্রেনের ধাক্কায় মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাসটি। অনেক মানুষের নিথর দেহ রেললাইনের দুইপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে ছিল। তখন আমিসহ আরও কয়েকজন মিলে বেশকিছু আহত মানুষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছি এবং চোখের সামনে একসাথে অনেকগুলো মানুষের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ দেখেছি। যা মনে হলে মনটা আজও কেঁদে উঠে।

আক্কেলপুর রেল স্টেশন মাস্টার হাসিবুল আলম জানান, সেই সময় ওই রেল ক্রসিংটি অরক্ষিত ছিল এবং কোনো গেটম্যানও ছিল না। দুর্ঘটনার পর সেখানে স্থায়ী গেট নির্মাণসহ সরকারিভাবে গেটম্যানও নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে রেল ক্রসিংটি দিয়ে নিরাপদে যানবাহন চলাচল করছে।

এ বিষয়ে বর্তমান আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম জানান, ২০০৬ সালের ১১ জুলাইয়ের দুর্ঘটনাটও খুবই মর্মান্তিক এবং আক্কেলপুরের ইতিহাসে প্রথম ট্র্যাজেডির ঘটনা। এ ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেখানে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *