বগুড়ায় রেলপথে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ
বগুড়া অফিস:
বগুড়া শহরে অরক্ষিত রেলগেটে দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও রেলপথ অবরোধে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেলগেট নির্মাণ ও গেটম্যান রাখার দাবিতে আন্দোলনের নেমেছে শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে কলেজের শিক্ষকরাও অংশ নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, দিন দিন বগুড়া শহরসহ আশপাশ এলাকায় রেলপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
গতকাল সোমবার সকালে সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনের শিক্ষার্থীরা শহরের ওয়াপদা পুরান বগুড়া এলাকায় রেলপথ অবরোধ করে। পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচি কঠোর আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এরআগে ৬ জুলাই কলেজের পশ্চিমে ওয়াপদা এলাকায় অরক্ষিত রেলগেটে মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার জেরে রেলপথে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করে কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনায় নিহত রাকিব হোসাইন মোস্তাকিম সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্স হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। শহরের পুরান বগুড়ার একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করতেন। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিমাদ্রিপাড়ার সুলতান হোসেনের ছেলে।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বলেন, রেলপথে সহপাঠীসহ কোন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখতে চাই না। কলেজের সামনে অরক্ষিত এলাকায় দুটি রেলগেট নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় গেটম্যান নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি করছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কলেজের পক্ষ থেকে একাধিকবার গেটম্যান নিয়োগের কথা বলা হলেও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবির স্মারকলিপি তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
বগুড়া জেলা ছাত্রদল সভাপতি হাবিবুর রশিদ সন্ধান বলেন, অরক্ষিত রেলগেটে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মানববন্ধন করা হয়। দাবির বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। শুধু কলেজ নয়, আশপাশের ছাত্রাবাস ও বাসিন্দাদের যাতায়াতের এই অরক্ষিত রেলগেট গুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে আছে।
সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে বগুড়া, নাটোর ও জয়পুরহাট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ২৯ জন নিহত হন। সান্তাহার থেকে সোনাতলা, নাটোরের বাগাতিপাড়া স্টেশন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও বাগজানা পর্যন্ত মোট ১৯৫ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে এসব মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, বগুড়া এলাকায় মারা গেছেন ৮ জন। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই বগুড়া শহরের ওয়াপদা গেটের সামনে সরকারি আজিজুল হক কলেজের পশ্চিম ও দক্ষিণপাশে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান কলেজ ছাত্র মোস্তাকিম। অসচেনতায় ঘটছে এসব দুর্ঘটনা।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেললাইন পার হওয়ার সময় বা লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় মোবাইল ফোন বা কানে হেডফোন ব্যবহার করা, রেললাইন ধরে অসতর্কভাবে হাঁটা, রেললাইনের পাশ দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব না মেনে যাতায়াত করা, না দেখে তাড়াহুড়া করে লেভেলক্রসিং পার হওয়া, চলন্ত ট্রেন আসার সময় সেলফি তোলার চেষ্টা, রেললাইনের ওপর বসে বেখেয়াল হয়ে গল্প করাসহ নানা কারণে বগুড়াসহ আশপাশ এলাকায় ট্রেনে কেটে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েও আত্মহত্যার ঘটনা আছে।