জয়পুরহাটে কিডনী দালাল কাগজপত্র জালিয়াতি এবং চোর চক্রের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার

জয়পুরহাটে কিডনী কেনাবেচা দালাল চক্রের তিনজন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জাল ডকুমেন্ট তৈরী চক্রের তিনজন ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফার চোর চক্রের চার সদস্যসহ মোট ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২০ জুলাই বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।

পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে কালাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় ঋণগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষদের প্রলোভন দিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করে আসছিলেন। এই ৭ চক্রের মধ্যে কয়েকজন নিজেও কিডনী বিক্রি করেছিল, পরে নিজেরাই অতি লোভের কারণে চক্রের সাথে জড়িয়ে যায় এবং মানুষকে ফাঁদে ফেলে। গরীব মানুষদের প্রথমে ৫/৭ লাখ টাকার প্রলোভন দিয়ে ঢাকা ও ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোন হাসপাতালে ২/৩ মাস পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তারা কিডনী অপসারণ করায়। পরে ভুক্তোভুগির সাথে চুক্তির অর্ধেক টাকাও না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তারা। গতকাল কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের রাইহান ও তার স্ত্রী মোসলেমার কিডনী নেওয়ার জন্য বিদেশে পাঠানো পরিকল্পনা করছিল চক্রটি, এমন খবর পেয়ে পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে চক্রের তিন সদস্যসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ইতিমধ্যে তারা আরও কয়েক জনকে কিডনী অপসারণের জন্য ভারতে পাঠিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সরাইল এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ফুল মিয়া, লক্ষিচাপর এলাকার আঃ কাদেরের ছেলে জুয়েল রানা ও ছত্র গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ফিরোজ হোসেন। অন্যদিকে জাল ডকুমেন্ট তৈরী চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জরুরী কাগজপত্র জালিয়াতির ডকুমেন্টস তৈরী ও তা ব্যবহার করে অবৈধভাবে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে আসছিল। গত বছরের ২৫ নভেম্বর চক্রটি জয়পুরহাট সোনালী ব্যাংক শাখার ভুয়া চালান, সীল, ১৪ লাখ টাকার জাল ডকুমেন্ট তৈরী করে আইনজীবির মাধ্যমে সোহেল রানা নামে সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আদালত থেকে জামিন করায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী পলাতক থাকে। এ ঘটনায় সদর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

২৭ জুন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের অন্যতম সদস্য আইনজীবি সহকারি আজিজার রহমান ওরফে আজিজার মহুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মুল হোতা নওগাঁর চক পিয়ার গ্রামের আবু নাছের মোঃ মাহফুজুল ওরফে নসু বাবুর জড়িত থাকার বিষয়টি জানা যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল তাকে ও জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডি এলাকার মৃত তসলিম উদ্দীনের ছেলে নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতির বিভিন্ন ডকুমেন্টস, ভূয়া ব্যাংক চালান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক সিল, বিভিন্ন আদালতের মামলার কাগজপত্র, জেলা সুপার বরাবর হাজতীর স্বাক্ষর নেওয়ার জাল আবেদনের কাগজ উদ্ধার কর হয়।

পুলিশ সুপার জানান, এ চক্রের সদস্যরা একেকজন ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। নসু বাবু জেলখানায় গিয়ে কৌশলে হাজতীর সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জামিন করে দিবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরে হাজতীর পরিবারের থেকে ৫০% টাকা নিয়ে নাজমুলের মাধ্যমে জাল ডকুমেন্ট তৈরী করে। পরে সব কাগজ তৈরী হলে আইনজীবির সহকারি আজিজার মহুরী আইনজীবির মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করে আসামীকে জামিন করায়। এছাড়া আরেক ঘটনায় পাঁচবিবি থেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফার চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই সদস্যরা ট্রান্সফরমার চুরি করে তার মুল্যবান তামা বিক্রি করে দেয়। কেউবা বিকাশে টাকা দিলে ট্রান্সফরমার ফেরত দেওয়া হতো। এমন এক ভুক্তভোগি পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম (সদ্য পুলিশ সুপার পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হক, সহকারি পুলিশ সুপার ইসতিয়াক আলমসহ প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

স্টাফ রিপোর্টারঃ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *