পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ, ৮ মাস পর লাশ উত্তোলন
বিরামপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বিরামপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুর আট মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (২ জুলাই ২০২৫) সকাল ১০টায় বিরামপুর পৌরসভার পূর্ব জগন্নাথপুর কবরস্থান থেকে ৭৬ বছর বয়সী আবুল হোসেন মণ্ডলের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। তিনি মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে এবং আজীবন অবিবাহিত ছিলেন।
লাশ উত্তোলনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ, পিবিআই-এর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোস্তফা ও তার নেতৃত্বাধীন একটি দল, বিরামপুর থানা পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
বাদী মোছাঃ শামসুন্নাহার আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন, তার ভাই আবুল হোসেনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বুকের হাড় ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় জমির দলিলে জোরপূর্বক টিপ স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে তাকে দিনাজপুর শহরের চেকআপ প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বাদীর দাবি, মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখে আসামিরা দ্রুত মরদেহ দাফনের উদ্যোগ নেয় এবং পারিবারিক সম্মতি ছাড়াই পূর্ব জগন্নাথপুর কবরস্থানে দাফন করে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি দুই মাস পর আদালতের শরণাপন্ন হয়ে লাশ উত্তোলনের আবেদন করেন।
মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫–৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন—আত্মীয় মোঃ শাকিল, মোঃ সোহেল রানা, মোছাঃ আফিয়া আঞ্জুম, মোঃ আছমান মণ্ডল এবং তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ হিমেল বাহার শুভ।
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর এসআই মোস্তফা বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মরদেহ উত্তোলন করে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে ময়নাতদন্ত চলছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
অন্যদিকে মামলার অন্যতম বিবাদী মোঃ শাকিল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বাদী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আশ্রয় নিয়েছেন। আবুল হোসেন মণ্ডলের মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয় এবং বাদি সামসুন্নাহার বেগমের ছেলে ও পারিবারিক সিদ্ধান্তেই পূর্ব জগন্নাথপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমাদের হয়রানি ও মানহানির উদ্দেশ্যেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ এমন ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে—তা ভাবনার বাইরে। তারা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।